It is now

Tuesday, September 3, 2013

হযরত আইউব (আঃ)কে কঠিন অসুখের দ্বারা আল্লাহর পরীক্ষা

হযরত আইউব (আঃ) ও হযরত ইউসুফ (আঃ) এর পরে এবং মুসা (আঃ) এর আবির্ভাবের পূর্বে হযরত আইউব (আঃ)এর এই পৃথিবীতে আগমন ঘটে। আইউব (আঃ) ছিলেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর। হযরত ইসহাক (আঃ) এর এক পুত্র ছিল ঈসু তার অন্য নাম ছিল ‘আদুম’। আইউব (আঃ) তার বংশের একজন। তাই তাঁকে আদুমী বংশের লোক হিসাবে ধরা হয়।


মরু সাগর (ডেড সি বা মৃত সাগর) ও আকাবা উপসাগরের মধ্যবর্তী স্থানে আদমী জাতির বসবাস ছিল। অঞ্চলটির উত্তরে মরু সাগর ও ফিলিস্থীন, দক্ষিনে আকাবা উপসাগর ও মাদইয়ান, পশ্চিমে সাইনা উপত্যকা, পূর্বে আরবের উত্তর সীমান্ত ও ‘মাওয়াব’ অঞ্চল অবস্থিত। ‘তওরাত’ কিতাবে আইউব (আঃ) এর এলাকাটির নাম ‘বোসরা’ হিসাবে উল্লেখ আছে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর যুগেও ‘বোসরা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল।

হযরত আইউব (আঃ) আল্লাহর অত্যন্ত খাঁটি বান্দা ছিলেন। শয়তান তাকে দেখে হিংসা করতো। কারণ শয়তান বেহেশত থেকে বিতারিত হবার সময় আল্লাহর ইজ্জতের কসম খেয়ে বলেছিলেন যে, আদম জাতির সকলকে সে পথভ্রষ্ট করে ছাড়বে। আল্লাহ বলেছিলেন, “কিন্তু আমার প্রকৃত ঈমানদার বান্দাকে তুমি কখনও পথভ্রষ্ট করতে পারবে না। আইয়ূব (আঃ) কে দেখে শয়তান ফন্দি করে আল্লাহকে বললো, “আইয়ূব (আঃ) এর কোন অভাব নাই, তাঁর শত পুত্র, তিন কন্যা। আরামের জন্য তাকে তুমি অগনিত সম্পদ দিয়েছ তাইতো সে তোমার ভক্ত।”

আল্লাহতা’য়ালা তখন আইয়ূব (আঃ) এর সমস্ত ধন-সম্পদ, পুত্র-কন্যা নিয়ে নিলেন। কঠিন পরীক্ষার মাঝে আইয়ূব (আঃ) পড়লেন। তাঁর সব স্ত্রী-কন্যা-পুত্র, আতœীয়-স্বজন সবাই তাঁকে ছেড়ে চলে গেলেন। শুধুমাত্র একজন স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে গেলেন না। ভীষন কষ্টের মাঝে থেকেও তিনি প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলেন। ‘হে আল্লাহ’ উলঙ্গ অবস্থায় আমি মাতার গর্ভ হতে ভূমিষ্ট হয়েছি এবং উলঙ্গ অবস্থাতেই আবার ফিরতে হবে। আল্লাহ তুমিই সব দিয়েছ, আবার তুমিই সব নিয়ে নেবে। তুমি আমায় যখন যেভাবে রাখ সে অবস্থাতেই যেন ঈমান আমল ঠিক রেখে তোমার শুকরিয়া আদায় করতে পারি, সে তৌফিক দিও।

শয়তান তখন বললো, “হে আল্লাহ মানুষের শরীরের উপর কষ্ট না এলে মানুষ আল্লাহকে ভোলে না। তাঁর অস্থি-মাংস বিপন্ন করো। দেখবে তখন সে তোমার অবাধ্য হবে।” আল্লাহর বিশ্বাস ছিল যে, শয়তান তার খাঁটি বান্দার কখনই কিছু করতে পারবে না। তাই তিনি আইউব (আঃ) কে আবারো পরীক্ষায় ফেললেন।

এবারে আইয়ূব (আঃ) এর আপাদমস্তক ভয়››কর পোকা দ্বারা পূর্ণ করলেন। ভীষন কষ্ট ও যন্ত্রনায় পতিত হলেন তিনি। তারপরেও আইয়ূব (আঃ) এক মুহুর্তের জন্যও সবর ভঙ্গ করেননি। তাঁর যত দুঃখ-কষ্ট বাড়লো, তিনি তত বেশী বেশী আল্লাহকে ডাকতে লাগলেন। শত কষ্টের মাঝেও আল্লাহর বিরুদ্ধে একটি অক্ষরও তাঁর মুখ দিয়ে বের হলো না। বরংচ তিনি গভীর আশা ও বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, ‘হে আল্লাহ তোমার রহমত দ্বারা আমার সকল দুঃখ-কষ্ট দূর করে দাও।

আঠারো বৎসর যাবৎ দীর্ঘ কঠিন পরীক্ষায় আইয়ূব (আঃ) উত্তীর্ণ হলেন। আল্লাহর রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হলো। আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তিনি যমীনে আঘাত করলেন। তৎক্ষনাৎ সেখান হতে ঝর্নাধারা বের হলো। তিনি সে পানি পান করলেন ও পানি দিয়ে গোসল করলেন। এতে আইউব (আঃ) সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে গেলেন।

হযরত আইউব (আঃ) এর স্ত্রী ’বিবি রহিমা’ অতিশয় নেককার ও স্বামীভক্তা ছিলেন। আইউব (আঃ) এর কঠিন অসুখের সময় সবাই তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী রহিমা তাঁকে ছেড়ে কোথাও যাননি। প্রান ঢেলে অনেক সেবা যতœ করতেন। একদিন সামান্য কারণে আইউব (আঃ) এর মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তখন তিনি আল্লাহর কসম খেয়ে বলেছিলেন যে, সুস্থ হলে তিনি স্ত্রীকে একশত বেত্রাঘাত করবেন। পরে এ ধরনের কসমের জন্য অনুতপ্ত হয়েছিলেন। আইউব (আঃ) সুস্থ হবার পর আল্লাহতা’য়ালা তাঁকে এ ব্যাপারেও অনুগ্রহ করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা তাঁকে একশত বেত্রাঘাতের পরিবর্তে এক মুষ্ঠি তৃনগুচ্ছ হাতে নিয়ে তা দ্বারা স্ত্রীকে হালকা ভাবে মেরে কসম পুরা করার সুযোগ দিয়েছেন।

আইউব (আঃ) ছিলেন অতি মহৎ বান্দা, প্রচন্ড ধর্য্যশীল ও আল্লাহর প্রতি ভীষন অনুরাগী। আল্লাহর সকল পরীক্ষাতেই তিনি কৃতকার্ষ হয়েছেন। তাই আল্লাহ তাঁকে আবারও অনেক ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলেন। আল্লাহর অশেষ কুদরতে পথে-ঘাটে-মাঠে তাঁর উপর ঝাঁকে ঝাঁকে স্বর্ন পতঙ্গ উড়ে পড়তো। আমাদেরও উচিৎ আইউব (আঃ) এর মত প্রচন্ড ধৈর্য্যশীল, কষ্ঠসহিষ্ণু ও ঈমানদার হওয়া। দুঃখ-কষ্ট-প্রাচুর্যে সর্বাবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।
-----------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র ঃ
আল্ কোরআন: সূরা আম্বিয়া, পারা ১৭ রুকু ৬,সূরা সোয়াদ, পারা ২৩, রুকু ১৪,সূরা বাকারা পারা ২, রুকু ৩, মকসুদুল মুসলিমীন, বোখারী শরীফ, আরজুল কোরআন, ২য় খন্ড, ১, ২৮, ৩৮ পৃষ্ঠা ।

প্রকাশ ঃ দৈনিক ইনকিলাব, ১ জুন, ২০০৯।                
------------------------------------------------------------------------By 

Khandaker Nazneen Sultana
Journalist

No comments:

Post a Comment