It is now

Sunday, April 7, 2013

পর্দাই নারীর ভূষণ/লজ্জাই নারীর ভূষণ


লেখক ঃ খন্দকার নাজনীন সুলতানা 
লজ্জাই নারীর ভূষণ।যে নারী যত বেশী পর্দায় থাকবে তার মর্যাদাও তত বেশী।উলঙ্গ নারী মূল্যহীন। ইদানিং উঠতি বয়সের মেয়েদের দিয়ে নাটক, সিনেমা বানানোর কৌশলে মেয়েদের করা হচ্ছে পর্দাহীন। ফ্যশন শো, মডেলিং, সুন্দরী প্রতিযোগিতা- এসবের আয়োজনের মাধ্যমে প্রায় উলঙ্গভাবে নারীকে প্রদর্শনী করে মূলত তাদের বানানো হচ্ছে পণ্য।

উলঙ্গ হয়ে নিজেদের দৈহিক সৌন্দর্য প্রদর্শনী করে নারীরা এখন নিলামে উঠেছে। এর ফলাফল ব্যক্তি, দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর।তাই পর্দা রক্ষার তাগিদে এবং অন্যদের পর্দায় উৎসাহিত করার লক্ষ্যে মেয়ে, মা, বোন, শাশুড়ি, দাদী-নানী, সকলেরই কোরআন হাদীসে বর্ণিত পর্দা সংক্রান্ত পূর্ন এবং নিভূল জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

পর্দা  নারীর মৌলিক অধিকার। পর্দাতেই নারী সর্বাধিক নিরাপদ। নারীকে নিরাপদে রাখতে পারলে তখন ব্যক্তি, দেশ, জাতি ও সমাজ, সংসার সবকিছুই নিরাপদ। প্রতিটি নারীরই উচিত উঠতে-বসতে, কাজেকর্মে, কথায়-আলাপে সর্বদাই পূর্ন পর্দা রক্ষা করে চলা। শুধু বাহ্যিক পর্দা নয়, অভ্যন্তরীণ পর্দা রক্ষা করাও আবশ্যক।দেহ ও মনে পূর্ণ পর্দা রক্ষা করার মাধ্যমেই নারী হয়ে উঠবে অপরূপ সুন্দরী, নিস্পাপ, নির্ভেজাল, নিস্কলুষ।

আল-কোরআনে পর্দা সংক্রান্ত প্রায় ১৭ টির অধিক আয়াত আছে।এসব আয়াতে মানুষের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় পর্দা সংক্রান্ত আলোচনা এসেছে । একটি মানুষের চোখ-হাত-পা-মন-শরীর প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গকেই পর্দায় রাখতে হবে।কারণ সবকিছু মিলিয়েই পূণাঙ্গ একটি মানুষ। মানুষের প্রতিটি অঙ্গপ্রতঙ্গ যখন পবিত্র থাকবে তখন মানুষও হবে পবিত্র। পূর্ণপবিত্র থাকতে চাইলে প্রথমে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করতে হবে।তারপর বন্ধ করতে হবে প্রতিটি অঙ্গপ্রতঙ্গের জেনা।
এ প্রসঙ্গে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঘোষণা করেছেন, "দুই চোখের জেনা হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে আসক্তির সাথে বেগানা পুরুষকে দেখা, তার কথা শ্রবন করা হচ্ছে দুই কানের জেনা। জিহ্বার জিনা হচ্ছে অপরিহার্য প্রয়োজন ব্যতীত বেগানা পুরুষের সাথে কথা বলা, গল্প-গুজব করা। হাতের জিনা হচ্ছে বেগানা বেগানায় আদান-প্রদান করা, করমর্দন করা। পায়ের জিনা হচ্ছে বেগানার সাক্ষাতে হেঁটে যাওয়া।অন্তরের জিনা হচ্ছে জিনার প্রতি আসক্তি প্রকাশ করাও আকাক্সক্ষা করা। প্রকৃত জিনার বাস্তব সত্যরূপ দিবে গুপ্ত অঙ্গ।"

আসুন কন্যা-মা ও বোনেরা আমরা সকল অঙ্গের জিনা হতে বিরত থাকি। জিনার ভয়ানক ও মারাত্মক শাস্তি হতে মুক্তি লাভ করি।মেয়েদের উচিত নয় বেপর্দায় ঘর হতে বের হওয়া।কারণ বেপর্দা নারীর জন্য অনেক বিপজ্জনক।এ প্রসঙ্গে সূরা আহযাব-এর ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ নারীদের সতর্ক করে বলেছেন যে-  "তোমরা নিজেদের ঘরের অভ্যন্তরে অবˉ’ান কর এবং জাহিলিয়াতের যমানার নারীদের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বের হয়ো না।"

মহিলারা পর্দার আড়াল থেকেই প্রয়োজনীয় বস্তু আদান-প্রদান করবে এটাই যুক্তিসঙ্গত এবং উপকারী।এর মাঝেই যাবতীয় কল্যাণ নিহিত।এ প্রসঙ্গে আল কোরআনের ঘোষণা-"যখন তোমরা (পুরুষরা) মহিলাদের কাছে জরুরী কিছু চাইতে মনস্থ কর তখন পর্দার আড়াল থেকে চেয়ে নাও।এটা তোমাদের এবং তাদের মনের জন্যে অধিকতর পবিত্র উপায়।"(সূরা আহযাব। আয়াত নং-৫৩)

পর্দার অভাবে নারীরা আজ সমাজে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, অবহেলিত ও অনেক ক্ষেত্রে ঘৃনার বস্তুতেও পরিণত হয়েছে। শুধু আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি করে একটি মেয়ের  পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব নয়। নারীর নিরাপত্তা রক্ষার্থে  প্রথমে নারীর নিজেকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। দেহ ও মনে নারী-পুরুষ সবাইকেই থাকতে হবে পূর্ণ পর্দায়।

হাদীসে আছে, ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন-"মহিলারা হল পর্দায় থাকার বস্তু। সুতরাং তারা যখন (পর্দা উপেক্ষা করে) বাইরে আসে তখন শয়তান তাদের (অন্য পুরুষের চোখে) সুসজ্জিত করে দেখায়।"(তিরমিযী)

সরকার অনেক চেষ্টা-তদবির আর আইন প্রণয়ন করেও নারী নির্যাতন বন্ধ
করতে পারছে না। কারণ দুধের বাটি সামনে রেখে ক্ষুধার্ত বিড়ালকে নসিয়ত করে লাভ কি? নারী জাতির নিজেদের প্রতিরক্ষাব্যুহ নিজেদেরই তৈরী করতে হবে। প্রতিরক্ষার এই অস্ত্রটি খুবই সুলভ সস্তা ও কার্যকরী। আর তা হলো নারীর পর্দা রক্ষা।

মেয়েরা প্রয়োজনে মুখমন্ডল, হাতের ও পায়ের পাতা খুলতে পারে। এছাড়া মেয়েদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গই পর্দায় ঢাকতে হবে।এ প্রসঙ্গে সূরা আহযাব-এর  ৫৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে- "হে নবী তোমার ˉ¿ীগণ, কন্যাগণ এবং মুমিন মহিরাদের বলে দাও, তারা যেন নিজেদের উপর নিজেদের চাদরের আঁচল ঝুলিয়ে দেয়। এতে তাদের চিনতে পারা যায়। ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।"

হাদীসে আছে, নবী করীম (সাঃ)-এর শ্যালিকা হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) একবার মিহি কাপড় পরে তার সামনে এলেন। কাপড়ের ভেতর দিয়ে তার অঙ্গপ্রতঙ্গ দেখা যাচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে নবী করীম (সাঃ) বললেন,  "হে আসমা সাবালিকা হওয়ার পর ইহা এবং ইহা ছাড়া শরীরের কোন অংশ ˉ¿ী লোকের পক্ষে দেখানো জায়েজ নেই।'এই বলে নবী করীম (সাঃ) তার মুখমন্ডল এবং হাতের কব্জির দিকে ইঙ্গিত করলেন।"(ফাতহুল কাদীর)

মুসলমান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই পর্দা পালন নামাজ-রোজার মতোই ফরজ। উ¤মূল-মুমেনীন হযরত সালমা (রাঃ) হতে বর্নিত, একদা তিনি এবং হযরত মায়মুনা (রাঃ) রসূল (সাঃ)-এর কাছে বসেছিলেন। হঠাৎ সেখানে ইবনে উম্মে মাকতুত এসে প্রবেশ করলেন। হুজুর (সাঃ) হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) ও মায়মুনা (রাঃ)-কে বললেন,  তোমরা (আগুন্তক) লোকটি থেকে পর্দা কর। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী (সাঃ) লোকটি তো অন্ধ, আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছে না । তখন রসূল (সাঃ) বললেন, তোমরা দু’জনও কি অন্ধ যে, তাকে দেখতে পাচ্ছ না? (আহমেদ তিরমিযী আবু দাউদ)

মেয়েদের পর্দা রক্ষা এতই জরুরী যে, নিজের কাছে প্রয়োজনীয় কাপড় না থাকলে অন্যের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে হলেও পূর্ণ পর্দা রক্ষা করতে হবে।


এ প্রসঙ্গে এক হাদীসে আছে, "এক মহিলা বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের মধ্যে যদি কারো চাদর না থাকে, তবে কিভাবে বের হবো? এ প্রসঙ্গে নবী করীম (সাঃ) বললেন, 'তার সাথী নিজ জিলবাব দ্বারা তার শরীরের উপর জড়িয়ে তাকে ঢেকে দেবে।"

হাফসা বিনতে আবদুর রহমান একদা সূক্ষ্ম দোপাট্টা পরে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর ঘরে হাজির হলেন। তখন তিনি তা ছিঁড়ে ফেলে একটি মোটা চাদর দিয়ে তাকে ঢেকে দিলেন।-(মুয়াত্তা ইমামা মালিক)

পর্দার দ্বারাই নারী তার শারীরিক ও আত্মিক মানমর্যাদা পরিপূর্ণভাবে রক্ষা করতে পারে। সূরা আরাফ-এর ২৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,  "হে আদম সন্তান, আমি তোমাদের জন্য পোশাক নাজিল করেছি, যেন তোমাদের দেহের লজ্জাˉ’ানসমূহকে ঢাকতে পারো। এটা তোমাদের জন্য দেহের আচ্ছাদন ও শোভাবর্ধনের উপায়। সর্বোত্তম পোশাক হলো তাকওয়ার পোশাক। উহা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি উজ্জল নিদর্শন। সম্ভবত লোকেরা উহা হতে শিক্ষা গ্রহণ করবে।"

পর্দা পালনের ব্যাপারে কোন মুসলমানের মনেই সংশয় থাকা উচিত নয়। নারীদের কন্ঠের  ও পর্দা রক্ষা করা আবশ্যক।এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সূরা আহযাবের ৩২ ও ৩৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে, "তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে মোলায়েম স্বরে কথা বলো না। কেননা এতে রুগ্ন অন্তর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের লালসার উদ্রেগ হতে পারে। নিজেদের ঘরে থাক। নামাজ কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য কর। আল্লাহ চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের পরিপূর্ণরুপে পবিত্র রাখতে।

সৃষ্টির আদিকাল হতেই পর্দা রক্ষার প্রতি আল্লাহতায়ালার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। শয়তান সর্বদাই আদম সন্তানের পর্দা নষ্ট করায় ব্যতিব্যস্ত থাকে। মিথ্যা কথা বলে, মিথ্যা ওয়াদা দিয়ে নারী-পুরুষের লজ্জাস্থান পরস্পরের কাছে উন্মুক্ত করে দেয়।

যে বা যারা পর্দা পালন করে না তারা শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সূরা আ’রাফের ২০, ২২ ও ২৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, "অতঃপর শয়তান তাদের দু’জনকেই কুমন্ত্রণা দিলো যেন সে তাদের নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহ , যা তাদের পরস্পরের কাছ থেকে গোপন করে রাখা হয়েছিল, প্রকাশ করে দিতে পারে। সে তাদের আরো বললো, তোমাদের মালিক তোমাদের এ গাছটির কাছে যাওয়া থেকে তোমাদের যে বারণ করেছেন, তার উদ্দেশ্য এছাড়া আর কিছুই নয় যে, সেখানে গেলে তোমরা উভয়েই ফেরেশতা হয়ে যাবে। অথবা এর ফলে তোমরা জান্নাতে চিরˉ’ায়ী হয়ে যাবে"(আল আ’রাফ, আয়াত নং-২০)

এভাবে সে তাদের দ’ুজনকেই প্রতারণার জালে আটকে ফেললো। অতঃপর এক সময় যখন তারা উভয়েই সে গাছ ও তার ফল আস্বাদন করলো, তখন তাদের লজ্জাˉ’ানসমূহ তাদের উভয়ের সামনে খুলে গেলো। সাথে সাথে তারা জান্নাতের কিছু লতাপাতা নিজেদের উপর জড়িয়ে নিজেদের গোপন ˉ’ানসমুহ ঢাকতে শুরু করলো; তাদের মালিক তখন তাদের ডাক দিয়ে বললেন, আমি কি তোমাদের উভয়কে এ গাছটির কাছে যেতে নিষেধ করিনি এবং আমি কি তোমাদের একথা বলে দেইনি যে, শয়তান হচ্ছে তোমাদের উভয়ের প্রকাশ্য দুশমন?। (আল আ’রাফ, আয়াত নং-২২)

শয়তানের প্ররোচনাতেই মানুষ পর্দা খুলে ফেলে এবং তখন নানাবিধ বিপদ ও পাপে পতিত হয়। শয়তান আমাদের প্রকাশ্য শত্র“। এ ব্যাপারে আল্লাহ আমাদের বারবার সাবধান করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, "হে আদমের সন্তানরা, শয়তান যেভাবে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে, তেমনি করে তোমাদেরও সে যেন প্রতারিত করতে না পারে, শয়তান তাদের উভয়ের দেহ থেকে তাদের পোশাক খুলে ফেলেছিল, যাতে করে তাদের উভয়ের গোপন ˉ’ানসমূহ উভয়ের কাছে উম্মুক্ত হয়ে পড়ে; মূলত সে নিজে এবং তার সঙ্গী-সাথীরা তোমাদের এমন সব ˉ’ান থেকে দেখতে পায়, যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাও না; যারা (আমাকে) বিশ্বাস করে না তাদের জন্য শয়তানকে  আমি অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি।"(আল আ’রাফ, আয়াত নং-২৭)

অতিশয় বৃদ্ধা মহিলাদের ব্যাপারে পর্দা সংক্রান্ত আল্লাহর ঘোষনা, "যে সকল অতি বৃদ্ধা স্ত্রী লোক, পুনরায় কোন বিবাহের আশা পোষণ করে না, তারা যদি দোপাট্টা খুলে রাখে তাহলে তাতে কোন দোষ নেই। তবে শর্ত এই যে, বেশভূসা প্রদর্শন করা যেন তাদের উদ্দেশ্য না হয়।এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা তাদের জন্য মঙ্গলময়।আর আল্লাহ সবকিছু জানেন ও শুনেন। (আন নূর, আয়াত নং-৬০)

পর্দা হচ্ছে লজ্জার ঢালস্বরূপ, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন- "লজ্জা ঈমান, আর ঈমানের বিনিময় জান্নাত।"(তিরমিযী)  "যে ব্যক্তি নিজের জিহ্বা এবং লজ্জাˉ’ান নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, সে সোজা জান্নাতে যাবে।"-(আহমদ, তাবারানী)

নবী করীম (সাঃ) আরো বলেছেন, " আল্লাহ লজ্জাশীলতা ও আবরণ পছন্দ করেন। যে নারী তার স্বামীরগৃহ ব্যতীত অন্যত্র (শরীয়ত বিরুদ্ধ কাজ করার মানসে ) পোশাক খুলে ফেলে, সে আল্লাহ প্রদত্ত ঢালকে ভেঙ্গে ফেললো।"

পর্দা ঈমান বা বিশ্বাসেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। আল্লাহতায়ালা পর্দানশীলদের 'বিশ্বাসিনী নারী' হিসেবে অভিহিত করেছেন।একদা বনু তামীম গোত্রের কিছু মহিলা স্বচ্ছ পোশাকাদি পরে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি ঐ নারীদেরকে বলেছিলেন, "যদি তোমরা সত্য সত্যই ঈমানদার ও বিশ্বাসী নারী হয়ে থাকো, তবে এগুলো নিশ্চয়ই বিশ্বাসী নারীদের পোশাক নয়। আর তোমরা যদি বিশ্বাসিনী নারী না হয়ে থাকো, তবে এসব উপভোগ করো।"

যাদের সাথে বিয়ে যায়েজ, তাদের সবার সাথেই বিনা প্রয়োজনে ও পর্দা ব্যতীত দেখা-সাক্ষাৎ হারাম।এ প্রসঙ্গে আল-কোরআনের ঘোষণা হল-"হে নবী! মুমিন পুরুষদেরকে বলে দিন, তারা যেন নিজেদের চোখকে বাঁচিয়ে চলে এবং নিজেদের লজ্জাˉ’ানসমূহের হেফাজত করে।এটা তাদের জন্য উত্তম। যা তারা করে আল্লাহ সে বিষয়ে পুরোপুরি অবহিত।"(আন নূর, আয়াত নং-৩০)

"আর হে নবী! মুমিন স্ত্রী লোকদের বলে দিন, তারা যেন নিজেদের চোখকে বাঁচিয়ে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাˉ’ানসমূহের হেফাজত করে ও নিজেদের সাজসজ্জা না দেখায়। কেবল সেসব ˉ’ান ছাড়া যা আপনা থেকেই প্রকাশিত হয়ে পড়ে এবং নিজেদের বুকের উপর ওড়নার আঁচল ফেলে রাখে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, স্বামীদের পিতা, নিজেদের ছেলে, স্বামীদের ছেলে, তাদের ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনদের ছেলে, নিজেদের স্ত্রী, অধিকারভুক্ত সেবিকা কিংবা এমন শিশু  যারা এখনও মহিলাদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে কিছুই জানে না এমন মানুষ ছাড়া অন্য কারো সামনে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা চলার সময় জমিনের ওপর এমনভাবে যেন পা না রাখে যে সৌন্দর্য তারা গোপন করে রেখেছিল তা (পায়ের আওয়াজে) লোকদের কাছে জানাজানি হয়ে যায়। হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দরবারে তওবা করো, আশা করা যায় তোমরা নাজাত পেয়ে যাবে।"(আন নূর, আয়াত নং-৩১)

আপন গৃহেও নারীর পর্দায় থাকা আবশ্যক। নারী তার গৃহে কাপড় পাল্টাতে পারে, বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারে, কিংবা গরম হতে রক্ষা পেতে, হয়তো একটু গায়ের কাপড় হাল্কা করে বিশ্রাম নিতে পারে। তাই অন্যের ঘরে ঢোকার সময় অনুমতি নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে বেপর্দায় নারী অবাঞ্ছিত অবˉ’ায় পড়তে পারে।এ ব্যাপারে আল্লাহর ঘোষণা-"হে ঈমানদারগণ! নিজেদের গৃহ ব্যতীত অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে প্রবেশ করো না। যতক্ষণ পর্যন্ত ঘরের লোকদের নিকট থেকে অনুমতি না পাবে এবং যখন ঢুকবে তখন ঘরের অধিবাসীদের সালাম বলবে।এই নিয়ম তোমাদের জন্য কল্যাণকর।আশা করা যায় তোমরা এর প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখবে।"(আন নূর, আয়াত নং-২৭)

"তোমাদের ছেলেরা যখন বুদ্ধির পরিপক্কতা পর্যন্ত পৌঁছাবে, তখন তারা যেন অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। যেমন তাদের বড়রা অনুমতি নিয়ে ঘরে ঢোকে। এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের সামনে উন্মুক্ত করে দেন। তিনি সর্বজ্ঞাত ও প্রজ্ঞাময়।” (আন্ নূর, আয়াত নং-৫৯)

ঘরে-বাইরে সর্বত্রই মেয়েদের মাথা ও শরীর ঢেকে রাখার নিয়ম। মেয়েরা হলো তেতুঁলের ন্যায় যা দেখলে ছেলেদের মুখে পানি আসতে পারে। নারী-পুরুষের অবাধে দেখা-সাক্ষাতে পরস্পরের মাঝে শয়তানী ওয়াসওয়াসার আবির্ভাব ঘটতে পারে। হাদিসে আছে-"মেয়েরা যখন মাথার কাপড় বা ওড়না ফেলে দেয়, সেখানে রহমতের ফেরেশতা থাকে না; শয়তান উপˉি’ত হয়ে তাদের মাঝে বিভিন্ন রকমের ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে।"

তাই, ঘরের ভেতর ও বাইরে সর্বদাই নারীদের মাথায় কাপড় বা ওড়না রাখতে হবে, আর ঘর হতে বের হওয়ার সময় পূর্ণ পর্দা রক্ষার তাগিদে বোরকা পরা আবশ্যক।
সন্তানরা যাতে সর্বদা পর্দা রক্ষা করে চলতে পারে এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক  দৃষ্টি রাখতে হবে। যেসব অভিভাবক সন্তানদের বেপর্দায় ছেড়ে দেয়, তাদের বলা হয় দাইয়ূস। আর হাদীস শরীফে আছে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন-"দাইয়ূস ব্যক্তি বেহেশতে যাবে না।" সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, দাইয়ূস কে?  নবী করীম (সাঃ) বললেন, "দাইয়ূস  সেই ব্যক্তি যে লক্ষ্য রাখে না যে,তার বাড়ীতে কে এলো, আর কে গেলো ? যে তার স্ত্রী-কন্যাদের বেপর্দাভাবে ঘর হতে বেরুতে দেয়। দাইয়ূসকে ৫০০ বছরের দূরত্ব হতে জাহান্নামে ফেলে দেয়া হবে।"(তিরমিযী)

নারীদের জন্য খোশবু ব্যবহার করে পরপুরুষদের আকর্ষণ করা অত্যন্ত গুনাহের কাজ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, "যে নারী খোশবু মেখে অন্য পুরুষের মাহফিলের মধ্যদিয়ে চলে যায়, সে নারী  'জেনাকারিণী'।" ( হাকেম, নাসাঈ)।

"কোন নারী যদি খোশবু ও আতর মেখে, যে মাহফিলে গায়রে মাহরাম পুরুষ থাকে সেখানে উপস্থিত হয়, তবে সে নারী জেনাকারিণীর মধ্যে গণ্য হয়।" (আবু দাউদ)।

"যে নারী খোশবু ও আতর মেখে মসজিদে গমন করে যতক্ষণ সে মসজিদ থেকে প্রত্যাবর্তন করে গোসল না করে ততক্ষণ পর্যন্ত তার নামায কবুল হয় না।" (ইবনে খোযায়মা)।

উম্মে খালাদ নামক এক মহিলার সন্তান জিহাদে শহীদ হলে বোরকা পরিধান করে তিনি নবী করীম (সাঃ)-এর কাছে ছেলের অবˉ’া জানতে আসলেন। তখন একজন সাহাবী বললেন, কি আশ্চর্য! মেয়ে লোকটি বোরকা পরে নিজের ছেলের অবˉ’া জানতে এসেছে? (অর্থাৎ) এটা তো বোরকা পরার সময় নয়। বরং বিলাপ এবং ক্রন্দন করার সময়। তখন মেয়ে লোকটি উত্তর করলেন,"আমার ছেলে মরেছে সত্য কিন্তু আমার লজ্জা শরমতো মরে নাই।" (আবু দাউদ)

ঠিক তাই, যাদের লজ্জা শরম আছে, তারা কখনও পর্দাহীন হয়ে নির্লজ্জ বেহায়ার মতো চলতে পারে না।এমনকি স্বামী-সন্তান হারাবার মতো কঠিন মুহূর্তেও তারা বেপর্দা হয় না। এটাই পর্দাশীলা নারীদের ঈমানের সফলতা।

বেপর্দায় চললে ইহজগতেও নানাবিধ অঘটনের সম্মুখীন হতে হয়। আর পরকালের শাস্তিতো আছেই। হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- "দোযখীদের দুটি প্রকার আমি দেখে যেতে পারিনি, তন্মধ্যের একজন হচ্ছে- সে সব নারী, যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ এবং যারা গর্বিত ভঙ্গিমায় কাঁধ হেলিয়ে দুলিয়ে অপূর্ব চালে চলবে। তাদের মস্তক উটের পিঠের মতো হবে। অর্থাৎ মাথায় কৃত্রিম কেশ সংযোজনের ফলে খোঁপা উঁচু হবে।তারা জান্নাতে যাবে না।বরং জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ অনেক দূর থেকে পাওয়া যায়।" (মুসলিম শরীফ)

পাতলা ও ফিনফিনে কাপড় পরিধান করাও পর্দার বহির্ভূত কাজ।এরাও অভিসম্পাতের যোগ্য।এ প্রসঙ্গে হাদীসে আছে, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন- "যেসব স্ত্রীলোক এমন পাতলা কাপড় পরিধান করে, যার মধ্য দিয়ে তাদের অংগ দৃষ্ট হয়, সেসব স্ত্রী লোক বিলাস-ব্যাসন দ্বারা নিজেদের প্রতি পরপুরুষদেরকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে এবং নিজেরাও পরপুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এতে স্পষ্টই প্রতিয়মান হয় যে, যদিও বাইরে তারা কাপড় পরিধান করে থাকে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা উলঙ্গ। এসব  স্ত্রীলোক অভিসম্পাতের যোগ্য তোমরা এদের প্রতি অভিশাপ দাও।এরা প্রকৃতই মালাউন। অভিশপ্ত।" (হাকেম)

নারী কতৃক পুরুষের পোশাক পরিধান ও পুরুষের রুপ ধারণ ইসলামে পর্দার পরিপন্থি। এদের জন্যে রয়েছে আল্লাহর অভিসম্পাত ও গজব। হাদীসে আছে,
নবী করীম (সাঃ) বলেছেন-"মেয়েদের নমুনা ধারণকারী পুরুষের উপর এবং পুরুষের নমুনা ধারণকারী মেয়েদের উপর অভিসম্পাত।" (বোখারী)

"সেসব লোকের উপর অভিসম্পাত পতিত হোক যারা মেয়ে লোকদের অনুকরনে বেশভূষা ধারণ করে চলাফেরা করে, যেসব মেয়েলোক পুরুষের অনুকরনে বেশভূষা ধারণ করে চলাফেরা করে, তাদের উপরেও আল্লাহর গজব পতিত হোক।"-(বোখারী, সুনান)

হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, নারীদের এমন আঁটসাট কাপড় পরতে দিওনা যাতে শরীরের গঠন পরিস্ফুটিত হয়ে পড়ে।
দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখাও পর্দার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রত্যেকেরই দৃষ্টি সংযত করে রাখা উচিত। নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন-"দৃষ্টি ইবলিসের বিষাক্ত তীরসমূহের একটি। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার ভয়ে তা থেকে বেঁচে থাকে, আল্লাহতা’য়ালা তাকে ঈমানের এমন নূর দান করেন, যার স্বাদ সে স্বীয় অন্তরে অনুভব করে।"

যে পুরুষ কিংবা স্ত্রী, একে অন্যের প্রতি ইচ্ছাকৃত কুদৃষ্টি করে, শেষ বিচারের দিন তাদের চক্ষুতে গরম সীসা ঢেলে প্রতিশোধ নেয়া হবে। যারা নিজেদের দৃষ্টি এবং লজ্জাˉ’ানের হেফাযত করে না আল্লাহতা’য়ালা তাদের চেহারা পরিবর্তন করে দেন।

হাদীসে আছে, নবী করীম (সাঃ) আলী (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বললেন, "হে আলী! কোন মেয়েলোকের উপর যদি হঠাৎ তোমার দৃষ্টি পড়ে যায়, তবে ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বিতীয়বার দৃষ্টিপাত করো না। কেননা, প্রথমবারের দৃষ্টি ক্ষমার যোগ্য কিন্তু দ্বিতীয়বারের ইচ্ছাকৃত দৃষ্টির জন্য জবাবদিহি করতে হবে।" (তিরমিযী)

যে নারী স্বামী ছাড়া অন্যকে দেখানোর জন্য সাজসজ্জা করে ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করে তাকে বলে ’তাবাররুজুল জাহিলিয়াত’। যদি কেউ এই উদ্দেশ্যে আকর্ষণীয়, সুন্দর ও উজ্জল রঙের বোরকা পড়ে তাও ’তাবাররুজুল জাহিলিয়াত’ হিসেবে গণ্য হবে। অবশ্য সব কিছুই নিয়ত ও ঈমানের উপর নির্ভর করে। নারী স্বয়ং জানে তার বিবেক কিসে তাড়িত হয়।

স্বামী-স্ত্রীর গোপন কথা অপরের কাছে প্রকাশ করা নিষিদ্ধ।এতে মুখের পর্দা বিনষ্ট হয়।এ প্রসঙ্গে হাদীসে আছে,"নারী-পুরুষকে নিষেধ করা হয়েছে যে, তারা যেন তাদের দাম্পত্য সম্পর্কিত গোপন অবˉ’ান অপরের নিকট বর্ননা না করে, কারণ এতেও অশ্লীলতার প্রচার হয় এবং মনের মধ্যে প্রেমাসক্তির সঞ্চার হয়।" ( আবু দাউদ)

আলী (রাঃ) বলেছেন, "দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বিস্ময় এই যে, মানুষ প্রতিদিন তার সামনে অসংখ মানুষকে মরতে দেখেও মৃত্যুর কথা স্মরণ করে না।"

বেপর্দার কারনেই আজ ঘরে ঘরে অশান্তি বিশৃঙ্খলা আর চলছে ঘর ভাঙ্গার খেলা। নারী-পুরুষের জীবন যে আজ কত দুর্বিসহ, বিপর্যস্ত, বেসামাল ও দুর্গতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে তা দেখেও যদি আমরা পর্দার গুরুত্ব অনুধাবন করতে না পারি তবে ইহ্কালে সীমাহীন দুর্গতিতো আছেই আর পরকালেও অনন্তকাল জ্বলতে হবে দোষখের আগুনে।

বেপর্দায় চলে একজন সিনেমার নায়িকা একাই পারে লক্ষ-কোটি পুরুষের চোখকে খারাপ করে দিতে। বেপর্দার ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ।মৃত্যুর পর মহিলাদেরকে পর্দার জন্য কঠিন বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। হাদীসে আছে, "দোষখীদের অধিকাংশই হবে নারী।" তাই সব নারীদেরই উচিত পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলা।

মূর্খ, বোকা ও অবলা নারীরা হয়তো ভাবতে পারে তাদের উপর জোর করে পর্দার বিধান চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।আসলে তা নয়। পর্দা নারীর মৌলিক অধিকার। পর্দার সাথে চলতে পারাটাই নারীর ন্যায্য পাওনা। মেয়েরা হীরার চেয়েও বেশী মূল্যবান। তাইতো সাত পর্দার মাঝে লুকিয়ে রাখার নিয়ম এই অতিমূল্যবান সতী নারীদের। আসুন মা ও বোনেরা, আর দেরী নয়। আমাদের মূল্য আর আমরা না কমাই। আজ থেকে এই মূহূর্ত থেকে থাকি আমরা পূর্ণ পর্দায়। আল্লাহ আমাদের সহায় হোক। আমীন।

প্রকাশ: দৈনিক ইনকিলাব (ইসলামী জীবন), ১২ এপ্রিল, ১৪ এপ্রিল, ১৯ এপ্রিল, ২১ এপ্রিল, ২০০৯।

লেখক ঃ খন্দকার নাজনীন সুলতানা

1 comment:

  1. আপনার মাথায় কি কিছু আছে কিনা তা আমার মনে হচ্ছে না, পর্দা নিয়ে আরটিকেল লিখে সেখানেই মেয়েদের ছবি পোস্ট দিয়ে রেখেছেন, ছিঃঃ ভাবতে অবাক লাগে। ভাই মেহেরবানি করে ছবিগুলো মুছে দিন, আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুজ দান করুন , আমিন

    ReplyDelete