It is now

Sunday, April 7, 2013

নারীর স্বার্থ সংরক্ষণে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) / ইসলামে নারীর অধিকার




লেখক ঃ খন্দকার নাজনীন সুলতানা
ইসলাম পূর্ব জাহেলী যুগে নারীদেরকে সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীবের ন্যায় মূল্যায়ন করা হতো। নারী যেন গৃহস্থালী আসবাবপত্র। অন্যান্য পন্যদ্রব্যের মতো নারীদেরও ক্রয় বিক্রয় করা হতো। বিয়ে-সাদীতে নারীর কোন মতামত গ্রহণ করা হতো না। আতœীয়-স্বজনের সম্পত্তিতে নারীদের কোন অধিকার ছিল না। ক্ষেত্র বিশেষে নারীরা স্বয়ংই মীরাসের মালের ন্যায় বন্টিত হতো।

ধর্ম-কর্ম বা ইবাদত উপাসনায়ও নারীদের ডাকা হতো না। ভাবা হতো নারীদের বেহেশতে যাবার কোন যোগ্যতাই নাই। অন্ধকার যুগে নারীদের প্রতি পুরুষরা এতই নির্মম, নিষ্ঠুর ও নির্দয় ছিল যে, মেয়েদেরকে জ্যান্ত কবরও দেয়া হতো।

শুধু আরবেই নয় বিশ্বের অনেক স্থানেই নারীরা ছিল চরম লাঞ্চিত ও উপেক্ষিত।


রোমের এক সংসদে পারস্পরিক পরামর্শক্রমে সাব্যস্ত করা হয়েছিল যে, নারী হলো এক অপবিত্র জানোয়ার যার আত্মাও মূল্যহীন। কোন কোন জাতির মাঝে স্বামীর মৃত্যু হলে স্বামীর সাথে স্ত্রীকেও চিতায় পুড়ে মরতে হতো। ৫৮৬ খ্রীষ্টাব্দে ফরাসীরা এক পর্যায়ে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, শুধুমাত্র পুরুষের সেবার জন্যই নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে। খ্রীষ্টানরা নারীদেরকে মনে করতো এরা পাপী ধংসাত্মক প্রেম দায়িনী। এদের ছায়াও অভিশপ্ত। অর্থাৎ মহানবী (সাঃ) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে সারা বিশ্বের সকল ধর্মই নারীদের উপেক্ষা করতো। নারীর প্রতি পুরুষের আচরণ ছিল অত্যন্ত হৃদয় বিদারক ও অমানবিক। নারীরা ছিল বড়ই অসহায়।

আল্লাহর অশেষ রহমতের আধার মানবতার নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নারীদের এরূপ অসহায়ত্ব দেখে অত্যন্ত দুঃখ পান। তিনিই সর্বপ্রথম নারীদের সকল অসহায়ত্ব দূর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন হিলফুল ফুজুল। তিনি ঘোষণা করেন, গোটা দুনিয়ার মাঝে শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে ধার্মিকা নারী। নবী কারীম (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি দুইটি মাত্র মেয়ের সুন্দররূপে ভরণ-পোষন ও প্রতিপালন করবে, সে বেহেশতে আমার এত নিকটবর্তী হবে যেরূপ হাতের আঙ্গুলসমূহ পরস্পর নিকটবর্তী।”  (মুসলিম শরীফ)
মেয়েরা কখনই ফেলনা নয়। মেয়েদেরকে যেন তাদের অভিভাবকরা সুন্দর ভাবে লালন পালন করেন সে মর্মে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি তিনটি মেয়ে বা তিন জন ভগ্নীর প্রতিপালন ও শিক্ষাদান সূচারু রূপে করবে যতদিন না তাদের নিজ নিজ ব্যবস্থা হয়, তার জন্য বেহেশত অবধারিত হয়ে যাবে। দুই জন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে নবী কারীম (সাঃ) বললেন, দুই জনের প্রতিপালনেও তাই। একজনের প্রতিপালন সম্পর্কেও নবীজী তাই বললেন।”  (মেশকাত শরীফ)
মেয়েদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা উচিৎ নয়। সন্তান প্রতিপালনে যেন ছেলে-মেয়েতে ভেদাভেদ না করা হয় সে সম্পর্কে নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, "যার কাছে কোন মেয়ে থাকে এবং সে যদি মেয়েকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করে এবং ছেলেকে অগ্রগণ্য না করে, আল্লাহ তাকে বেহেশত দান করবেন।"  (আবু দাউদ)

কোন কারনে যদি মেয়ে স্বামী পরিত্যাক্ত হয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে আসে তবে বাবা-মা ও ভাইদের উচিৎ তার জন্য ব্যয় করা। এর জন্য তারা যেন তাকে খোটা না দেয়, কারণ এ ব্যয় উত্তম সদকা হিসাবে গন্য হবে। এ প্রসঙ্গে নবী (সাঃ) বলেছেন যে, “তোমার কোন মেয়ে স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে নিরাশ্রয় রূপে তোমার আশ্রয়ে ফিরে আসলে, তার জন্য তুমি যা ব্যয় করবে তা তোমার জন্য সর্বাধিক উত্তম দান-খয়রাত হিসাবে গন্য হবে।”  (ইবনে মাজা শরীফ)

এ পৃথিবীতে বিভিন্ন ভাবে আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের পরীক্ষা করেন। কন্যা সন্তান দিয়ে এবং কন্যা

সন্তানের উপর নানা প্রকার বিপদ আপদ দিয়েও আল্লাহর তরফ হতে অভিভাবকদের পরীক্ষা করা হয়। এ পরীক্ষায় যে জয়ী হবে সে ইনশাল্লাহ জাান্নাতবাসী হবে।

এ প্রসঙ্গে একটি হাদীস উল্লেখ করা যায়। হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একদা একজন বিপন্না মহিলা তার দুটি কন্যা সন্তান সহ আমার কাছে কিছু পাওয়ার আশায় এসেছিল কিন্তু আমার কাছে তখন একটি খুরমা ব্যতিত অন্য কোন খাদ্য ছিল না। আমি তাকে তাই দিলাম। মহিলা খুরমাটি দু’ভাগ করে দুই কন্যাকে দিল এবং নিজে কিছু খেল না। অতঃপর সে চলে যাওয়ার পর পরই নবী করীম (সাঃ) ঘরে প্রবেশ করলেন এবং আমি তাঁকে ঘটনাটির আদ্যপান্ত বললাম। হুযুর (সাঃ) বললেন, যাকে আল্লাহ এ ধরনের কন্যা সন্তান দিয়ে পরীক্ষায় ফেলেছে, অতঃপর সে কন্যাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে। (কিয়ামতে) এ কন্যাই তার জন্য দোযখের ঢাল স্বরূপ হবে।”   (বুখারী, মুসলিম)

কন্যা সন্তানরা আল্লাহর রহমত স্বরূপ এ পৃথিবীতে আসে। তাই কখনই কন্যাদের অবজ্ঞা ও অবহেলা করা উচিৎ নয়। কন্যার উছিলাতেই অভিভাবকরা ইহকালে ও পরকালে উভয় জগতেই আল্লাহর নৈকট্য ও সাহায্যপ্রাপ্ত হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে আর একটি হাদীসে পাই, নাবীত ইবনে শুরাইত (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, "আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, যখন কোন ব্যক্তির কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে, সেখানে আল্লাহ ফেরেশতাদের পাঠান। তারা গিয়ে বলে, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক হে ঘরবাসী। তারা কন্যাটিকে তাদের ডানার ছায়ায় আবৃত করে নেয়, তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় এবং বলে একটি অবলা জীবন থেকে আরেকটি অবলা জীবন ভূমিষ্ট হয়েছে এর তত্ত্বাবধানকারী কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত হবে।" রিযিকের মালিক আল্লাহ। তাই কখনই অভাবে ও দুঃখ-কষ্টে কন্যাদের মৃত্যু কামনা করা উচিৎ নয়। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, "তাঁর কাছে এক ব্যক্তি বসা ছিল। তার ছিল বেশ কটি কন্যা সন্তান। সে কন্যাদের মৃত্যু কামনা করছিল। শুনে ইবনে উমর অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে বললেন, তাদের রিযিকদাতা কি তুমি?"  (আদাবুল মুফরাদ)

নারীরা আল্লাহর কাছেও অত্যন্ত প্রিয়। তাইতো নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের সন্তানদের মধ্যে মেয়েরাই উত্তম।”
মাতৃত্বের অপরিসীম মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) বিশ্ববাসীকে জানালেন, “মায়ের পায়ের নীচে
সন্তানের বেহেশত।” অর্থাৎ যে নারীকে জাহান্নাম সৃষ্টির কারণ মনে করা হতো সেই নারীর পায়ের নীচেই ঠাঁই হলো বিশ্ববাসীর জান্নাত। নারীর জন্য এর চেয়ে বড় সম্মান ও নেয়ামত আর কি হতে পারে?

দোষ-গুন মিলিয়েই মানুষ। নারী-পুরুষ উভয়ের মাঝেই কিছুনা কিছু দোষ থাকতে পারে। তাই বলে তাকে ঘৃনা বা অবহেলা করা উচিৎ নয়। তাকে শুধরে দেয়া সকলের কর্তব্য। সকলের মাঝের গুণগুলোকে অন্বেষণ করেই সকলকে ভালবাসতে হবে। তবেই সকলের মাঝে সম্প্রতি গড়ে উঠবে। এ সম্পর্কে নবী করীম (সাঃ) বলেন, “কোন ঈমানদার পুরুষ যেন কোন ঈমানদার নারীকে ঘৃণা না করে, কেননা তার (নারীর) মাঝে একটি ব্যাপার যদি অপছন্দনীয় থাকে, তা হলে তার অপরাপর গুনাবলী নিশ্চয়ই পছন্দনীয় পাওয়া যাবে।”

যে সব স্বামীরা স্ত্রীদের গায়ে হাত তোলে, মারধর করে এরা মোটেও ভালো স্বামী নয়। নবী (সাঃ) বলেছেন, “সহধমিনীর সাথে যে উত্তম জীবন যাপনকারী হয়, সেই উত্তম মানুষ। আমি আমার সহধর্মিনীদের সাথে উত্তম জীবন যাপন করি।" (তিরমিযী শরীফ)

একদা নবীকারীম (সাঃ) কড়া নির্দেশ দিলেন, ”গৃহিনীদেরকে কেহ প্রহার করতে পারবে না। অতপর একদিন ওমর (রাঃ) নবীজীর কাছে প্রকাশ করলেন, নারীরা অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে গিয়েছে। সেমতে নবী করীম (সাঃ) (প্রয়োজন হলে সংযমের সাথে) প্রহারের অনুমতি দিলেন। এরপর বহু সংখ্যক মহিলা তাদের স্বামীদের অভিযোগ নিয়ে নবীজীর গৃহে ভিড় জমালো। তখন রসূলুল্লাহ (সাঃ) কঠোর ভাষায় বললেন, অনেক মহিলা তাদের স্বামীদের সম্পর্কে অভিযোগ করছে, এরূপ স্বামীগন মোটেই ভালো মানুষ নয়।”  (আবু দাউদ শরীফ)

নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, "নারীরা নামাজ, রোজা, সতীত্ব রক্ষা ও স্বামীর আনুগত্য এই সংক্ষিপ্ত আমল দ্বারা আল্লাহ তা’য়ালার কাছে এত বড় মর্যাদা লাভ করবে যে বেহেশতের যে কোন শ্রেণীতে সে প্রবেশ করার অধিকার লাভ করবে।"  (মেশকাত, ২৮১)

মুহাম্মদ (সাঃ) আরো বলেছেন, "পরিপূর্ণ ঈমানদার ঐ ব্যক্তি যে তার সহধর্মিনীর সাথে সদ্ব্যবহার করে এবং তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়।"  (তিরমিযী শরীফ)

আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) তার সহধর্মিনীদের প্রতি অতি উত্তম ছিলেন। "একবার সফর অবস্থায় বিবি সফিয়া (রাঃ) উটের উপর উঠতে পারছিলেন না বলে নবী করীম (সাঃ) নিজ উরু পেতে দিলেন। সফিয়া (রাঃ) সিঁড়ির ন্যায় নবীজীর উরু মোবারকের উপর পা রেখে উটে আরোহন করলেন।"  (বোখারী শরীফ)

 সহধর্মিনীদের সাথে নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সর্ম্পক অত্যন্ত সুমধুর ছিল। আয়েশা (রাঃ)-এর মাত্র ৬ বছর বয়সে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে বিয়ে হয়। ৯ বছর বয়সে তাঁকে নবীজির ঘরে  তুলে নেয়া হয়। তখন নবী কারীম (সাঃ)-এর বয়স ছিল ৫০ বছর। নবী (সাঃ) আয়েশা (রাঃ)-এর বাল্য বয়সের প্রতি সর্বদাই লক্ষ্য রাখতেন। আয়েশা (রাঃ) যেন কখনও মনে দুঃখ-কষ্ট না পান সে বিষয়গুলো সবসময়ই মনে রাখতেন। আয়েশা (রাঃ) এর সাথে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দৌড় প্রতিযোগীতায়ও অংশ গ্রহন করেছিলেন।

স্ত্রীদের প্রতি মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন অনেক মর্যাদাবান ও সহানুভূতিশীল। ঐতিহাসিক ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিদায় হজ্জ্বের ভাষনে নবী (সাঃ) বলেছেন, “নারীদের উপর স্বামীদের যেরুপ হক ও দাবী আছে তদ্রুপ স্বামীদের উপর স্ত্রীদেরও হক ও দাবী আছে।”

তিনি আরো বলেছেন, “নারীদের প্রতি আমার বিশেষ নির্দেশ পালন করো তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও সর্বাধিক কল্যাণকর  সম্পর্ক বজায় রেখো।”
স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন যে, “নারী জাতি সৃষ্টিগত ভাবেই একটু বক্র স্বভাবের পূর্ণ সোজা করতে চাইলে (সোজা না হয়ে) ভেঙ্গে যাবে। তথা বিচ্ছেদের পাল্লায় এসে যাবে। সুতরাং তাকে বাঁকা থাকতে দিয়েই তার সাথে তোমার জীবিকা নির্বাহ করতে হবে। তোমাদের প্রতি আমার বিশেষ উপদেশ, তোমরা নারীদের প্রতি উত্তম ও ভালো হয়ে থাকবে।”  (মুসলিম শরীফ)

নবী করীম (সাঃ) শুধুমাত্র নারীদের মর্যাদাই দেননি, সাথে সাথে অধিকারও সংরক্ষন করেছেন। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, মানবিক, ধর্মীয়, শিক্ষাগত, নিজস্ব সম্পদ স্বাধীন ভাবে ব্যায়, পৈত্রিক, স্বামীর ও আত্মীয়দের পরিত্যাক্ত সম্পদে অধিকার লাভসহ মানব জীবনের আর যতো অধিকার থাকতে পারে, সবই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নারীদের দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “হে ঈমানদারগন! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকার গ্রহণ করা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং তাদেরকে আটকে রেখো না।”
হাকিম ইবনে মুয়াবিয়া (রাঃ) তার পিতা মুয়াবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম হে আল্লাহর রাসূল, স্বামীর উপর স্ত্রীর কি কি অধিকার রয়েছে? মহানবী (সাঃ) বললেন-
১) তোমরা যা খাবে, তাই তাদের খাওয়াবে।
২) তোমরা যা পরবে, তাই তাদের পরাবে।
৩) তাদের মুখমন্ডলের উপর মারবে না।
৪) তাদেরকে খারাপ ও অশ্লীল গালাগালি করবে না। এবং
৫) ঘর ছাড়া অন্য কোথাও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করবে না।

নারীর সমস্ত অধিকার ও প্রাপ্তিগুলো নারীদেরকে দেয়া না হলেই পুরুষরা গুনাহগার হিসাবে গন্য হবে। হাদীসে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে,
“একজন লোকের গুনাহগার হবার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, যাদের (অর্থাৎ স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ইত্যাদি) ভরণ পোষণের দায়িত্ব তার উপর অর্পিত, তাদের প্রতি সে সকল ব্যাপারে সে চরম উপেক্ষা দেখাবে।”

হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "পূর্ণ মুমিন সেই ব্যক্তি, যার চরিত্র উত্তম এবং যে তার পরিবার-পরিজনের (স্ত্রী-পুত্রদের) প্রতি সদয়।"  (তিরমিযী)

মুসলিম সমাজে ইসলাম কোরআন ও হাদীসের মাধ্যমে নারীর যে অধিকার ও পদমর্যাদা দিয়েছে তার সবটুকু কৃতিত্বের দাবীদার হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। ইসলাম পূর্বে অন্যান্য ধর্মে নারীদের প্রতি যে নির্যাতন, ঘৃণা, তুচ্ছ-তাচ্ছিলতা, উপেক্ষা ও অন্যায়-অত্যাচার করা হতো, মহানবী (সাঃ) এর বিরোধীতা করে নারীকে দিয়েছেন অপরিসীম সম্মান ও অপরিমেয় অধিকার।

জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রেও ইসলাম নারী-পুরুষের মাঝে কোন ভেদাভেদ সৃষ্টি করেননি। মহানবী (সাঃ) এ প্রসঙ্গে বলেছেন- ‘প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর বিদ্যার্জন ফরজ।’

ইসলাম ঘৃনতম অবস্থা হতে নারীজাতিকে কল্যানময়ী ও পূর্ণময়ী রুপ দিয়ে গৌরবের উচ্চাসনে বসিয়েছেন। নারীর জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন সর্বময় অধিকার। পবিত্র আল-কোরআনের সূরা নিসার ৭নং আয়াতে ঘোষিত হয়েছে, “নারীদের রয়েছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নির্ধারিত অংশ।” স্বামীদেরকে বলা হয়েছে স্বামীরা যেন সন্তুষ্ট চিত্তে স্ত্রীদের প্রাপ্য মোহরানা শোধ করে দেয়। এছাড়াও জমি-জমার মালিকানা, বিবাহে সম্মতি, ন্যায্য অধিকার না পাবার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ, ধন-সম্পদ অর্জন ও তা স্বাধীন ভাবে খরচ করা, ইচ্ছানুযায়ী দান-সদকা করা, নামায-রোজা, হজ্জ্ব-যাকাত ও অন্যান্য এবাদত সমূহে এবং ধর্মীয় বিধি-নিষেধ তাকে পুরুষের সম অধিকার এবং কোন কোন ক্ষেত্রে নারীকে অগ্রাধিকার প্রদান করেছে ইসলাম।
সম্প্রতি কিছু সংখক নারী সমঅধিকারের জন্য লড়াই করে ‘নারী পুরুষ সমঅধিকার’ আইনও পাস করিয়ে নিয়েছেন। কি বুদ্ধি তাদের! ইসলাম নারীকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দিয়েছে অগ্রাধিকার আর ওনারা সমঅধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। সুখে থাকতে ভূতে কিলায়। তা না হলে কি আর কেউ অধিকার কমায়? ইসলামে যেহেতু একজন নারীর তুলনায় একজন পুরুষের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিকার কম রয়েছে, তাই একজন পুরুষ দাবী তুলতে পারে যে, আমরা সম অধিকার চাই। নিতান্তই গবেট না হলে একজন নারী কি করে অগ্রাধিকার বাদ দিয়ে সমঅধিকারের জন্য লড়তে পারে? আসলে ওসব গুটিকয়েক সমঅধিকারের জন্য লড়াইকৃত নারীদের দোষ দিয়ে লাভ কি? ওনাদের মস্তিষ্ক উন্নতমানের বিদেশী ঔষধ দিয়ে ধোলাই করে দেয়া হয়েছে। ইসলামে নারীর কি কি অধিকার রয়েছে তা না জেনেই ওনারা ‘কান নিয়ে গেছে চিলে’ বলে চিলের পিছে ছুটোছুটি করছেন। আরে কানতো কানের জায়গাতে আছে। তবে তা দেখার মত সুস্থ চোখ ও অনুভূতি প্রয়োজন।

আগে বাসে নারীরা দাঁড়িয়ে থাকলে পুরুষরা উঠে নারীদের বসতে জায়গা দিত। ভাবতো আহা ‘মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্ত’ সেই মায়ের জাতি দাঁড়িয়ে আছে তাই কি হয়? আপা, মা, বোন কিংবা খালা বসুন বসুন। কত সম্মান করা হতো মেয়ে জাতিদের। আর এখন মায়ের বয়সী কেউ দাঁড়িয়ে থাকলেও অনেক পুরুষরা উঠে বসার জায়গা দিতে চান না। বলেন, এখন সমঅধিকারের যুগ। আমরা পুরুষরা দাঁড়িয়ে থাকলে নারীদের দাঁড়াতে অসুবিধা কোথায় ? পুরুষদের দোষ দিচ্ছি না। সমঅধিকারের লড়াইয়ে জেতার পর এসব হলো পুরুষদের পক্ষ থেকে নারীদের প্রাপ্ত উপযুক্ত অভিনন্দন।

আগে বাসে ওঠার সময় পুরুষরা নারীদের জায়গা দিয়ে বলতো, ঠিক আছে আপনারা বাসে আগে উঠুন। এখন আর বলে না। আর বলবেই বা কেন? সমঅধিকার বলে কথা। এখন যুগ সমঅধিকারের। চাকুরীজীবি স্বামী, স্ত্রীকে বলে আমি কষ্ট করে চাকরী করে টাকা উপার্জন করছি। আর তুমি ঘরে বসে কি করো? তুমিও চাকরী করো। যে স্বামী ইট ভাঙ্গে সেও তার স্ত্রীকে দিয়ে ইট ভাঙ্গাচ্ছে।যে স্বামী মাটি কাটে সেও তার স্ত্রীকে দিয়ে মাটি কাটাচ্ছে।

 আগে বাইরের পরিশ্রমের কাজগুলো পুরুষরা  করতো। আর সন্তান জন্মদান, প্রতিপালন, খাওয়ানো, সেবা-যতœ, রান্না এসব ঘরের কাজগুলো নারীরা করতো। আর এখন রাস্তা তৈরী, ইট ভাঙ্গানো, দালানের গাঁথুনী দেয়া, মাটি কাটা, মাটি বহন করা এসব বাইরের পরিশ্রমের কাজগুলোও অনেক ক্ষেত্রে নারীকে দিয়ে করানো হচ্ছে। ঘরে ঘরে সৃষ্টি হচ্ছে অশান্তি । সমঅধিকারের ফলাফল।

বেকার পুরুষরা বিয়ে করতে পারছে না। ফলে অনেক নারী অবিবাহিত থেকে যাচ্ছে। বেহায়াপনা, নিলর্জ্জতা, অবাধ যৌনাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। স্ত্রী চাকরী করছে, স্বামী বেকার। তখন বেকার স্বামী মানসিক অস্থিরতায় ভুগছে। চাকুরীজীবি নারী বেকার স্বামীর অবাধ্য হয়ে উঠছে। ঘরে ঘরে ঝগড়া, মারা-মারি, বিশৃংঙ্খলা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাঙ্গছে রহমতে পরিপূর্ণ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন।

‘সমঅধিকার’ তাই মেয়েরা স্যালোয়ার-কামিজ ওড়না ছেড়ে সার্ট-প্যান্ট পড়ছে। যুক্তি হলো ‘ছেলেরা পড়তে পারলে আমরা পারবোনা কেন? লংঘিত হচ্ছে নারীর পর্দা।

নারী জাতির প্রতি আমার আবেদন-আসুন, মা-বোন কিংবা কন্যারা, সমঅধিকারের জন্য লড়াই নয়। ইসলাম নারীদের যে অধিকার গুলো দিয়েছে তা সম্পর্কে সচেতন হই। প্রয়োজনে সে অধিকার গুলোর যথাযথ বাস্তবায়নের চেষ্টা করি। যৌতুক প্রথা বন্ধ করি। ইসলামী উত্তরাধিকার আইনে নারীর প্রাপ্ত সম্পত্তি বুঝে নেই। স্ত্রীদের উপর অমানুষ স্বামীদের অত্যাচার বন্ধ করাই। ভাইয়ের উপর বোনের অধিকার, পিতার উপর কন্যার অধিকার আদায় করি। ‘লজ্জ্বাই নারীর ভূষন’ আর ইসলামী পর্দায় থেকে কাজ করার অধিকার নারীর মৌলিক অধিকার। এ অধিকার গুলো বাস্তবায়নে সোচ্চার হই।

 আমরা আর নটের মতো চলবো না। তোতার মতো শেখানো বুলি আওড়াবো না। নিজেরাই কোরআন-হাদীস অধ্যয়ন করে জেনে ও বুঝে নেই-আমাদের কি কি অধিকার, দায়ীত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। নারী হিসাবে পরিবার দেশ-জাতি ও সমাজের কাছে আমাদের করনীয় কি? চাওয়া-পাওয়া কি? আমরা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কতটুকু পালন করছি। আর আমরাই যদি দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা করি, তবে তা সংশোধনের জন্য আমাদের কি করা উচিৎ। তারপর অধিকার নিয়ে লড়াই করি। অন্যের দোষ-ত্র“টি ও গন্ধ তালাশ করার আগে নিজের দোষ-ত্র“টি গুলো সংশোধন করে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয় কি? আসুন বুদ্ধিমতি হই, ঠিক কাজটি করি। আমাদের শ্লোগান হোক,

“সমঅধিকার নয়, আমরা চাই ইসলামে নারীকে প্রদত্ত অগ্রাধিকার সমূহের সঠিক বাস্তবায়ন।”

প্রকাশঃ দৈনিক ইনকিলাব, ১০ মার্চ ২০০৯।

No comments:

Post a Comment