It is now

Tuesday, April 30, 2013

আবু গারীব কারাগার থেকে ফাতেমার চিঠি




অনুবাদ: খন্দকার নাজনীন সুলতানা
সূত্র: মাফকারাট আল-ইসলাম (বাগদাদের একটি আরবী নিউজ এজেন্সি)
 

আনুমানিক রাত ১২টা ২৫ মিনিট, ডিসেম্বর ২১, ২০০৪, শনিবার, মুজাহিদীন কর্মচারীরা দক্ষিণ বাগদাদের আবু গারীব কারাগারে অকস্মাৎ এক নজিরবিহীন হামলা চালায়। হামলাটি সংঘটিত হয়েছিল ফাতেমা নামের একজন মহিলা কয়েদির একটি চিঠির জন্য, যা মুসলিম যোদ্ধাদের মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল।

ফাতেমার চিঠি, একটি হাতে লেখা দলীল সম্প্রতি আবু গারীব কারাগার হতে গোপনে উদ্ধার করা হয়েছে। ফাতেমা ঐ এলাকার একজন খ্যতিমান মুজাহিদের বোন। আমেরিকান সৈন্যরা কিছুদিন পুর্বে ঐ মুজাহিদের বাড়ীতে হঠাৎ হামলা চালায়। কিন্তু তাকে পায় না।তাই তারা মুজাহিদের বোনকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়, যেন ঐ মুজাহিদ নিজ থেকে ধরা দেয়।

ফাতেমার মূল চিঠি:

”পরম করুনাময় আল্ল¬াহতা’য়ালার নামে, (হে মুহাম্মদ) তুমি বলো, আল্ল¬াহ এক ও একক। তিনি কারোই মুখাপেক্ষী নন। তাঁর থেকে কেউ জন্ম নেয়নি, আর তিনিও কারো থেকে জন্ম গ্রহণ করেননি। আর তাঁর সমতুল্য দ্বিতীয় কেউই নেই। (সুরা-১১২, আল এখলাস, আল কোরআন)

আমি আল¬াহতা’য়ালার গ্রন্থ হতে এই পবিত্র সূরাটি পছন্দ করেছি কারণ এর দারুন প্রভাব পড়েছে আমার উপর এবং আপনাদের সবার উপরেও। বিশ্বাসীদের হৃদয়ে এক প্রকার ভয় ও শ্রদ্ধা মিশ্রিত বোধের জন্ম দেবে।

আমার ভাই মুজাহিদীন আল¬াহর পথে আছে। আপনাদের আমি কি বলবো? তবু বলছি, আমাদের জরায়ু বানর ও শুকর জাতীয় লম্পটদের সন্তানে ভর্তি হয়ে আছে। যারা আমাদের বলাৎকার করেছে। অথবা (আমি) আপনাদের বলতে পারি যে, তারা আমাদের দেহকে বিকৃত করেছে। আমাদের মুখমন্ডলকে ঝলসে দিয়েছে এবং আমাদের ঘাড়ে ঝোলানো কোরআনের ছোট্ট কপিটি অযথা ছিঁড়ে ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছে।

আল¬াহ অতি মহান, আপনারা কি আমাদের পরিস্থিতি অনুধাবন করতে
পারছেন না ? এটা সত্য, আপনারা জানেন না আমাদের সাথে কি ঘটেছে ? আমারা আপনাদের বোন। আল¬াহ হিসাব নিকাশের সময় ভবিষ্যতে এ সম্পর্কে আপনাদের জিজ্ঞেস করবে।

আল¬াহর কসম কারাগারে আসা পর্যন্ত আমাদের এমন কোন রাত কাটেনি  যে রাতে বানর ও শুকর জাতীয় অমানুষরা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েনি। তারা তাদের পূর্ণ স্বাদ মিটিয়ে নিস্তেজ হওয়া অবধি আমাদের দেহকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করতে থাকে।

আমারা তারাই, যারা আল¬াহর ভয়ে আমাদের কুমারিত্বকে সব সময় পাহারা দিয়ে রেখেছিলাম। আল¬াহকে ভয় করুন। আমাদের মেরে ফেলুন। আমাদের ধ্বংস করে দিন। তাদের আনন্দ উপকরণ হিসাবে ধর্ষণ করার জন্য আমাদের রেখে যাবেন না। এভাবে সর্বশক্তিমান আল¬াহর মহাকৃতিত্বকে মর্যাদাসম্পন্ন করা হবে।
আমাদের ব্যাপারে আল¬াহকে ভয় করুন। তাদের কামান ও উড়োজাহাজগুলোকে বাইরে রেখে আসুন। আবু গারীব কারাগারে আমাদের কাছে আসুন। আমি আপনাদের ধর্ম বোন। তারা আমায় একদিন নয়বারেরও বেশী ধর্ষন করেছে। আপনারা কি অনুধাবন করতে পারছেন? চিন্তা করুন, আপনাদের একজন বোন ধর্ষিত হচ্ছে।

আপনারা কেন ভাবতে পারেন না যে, আমি আপনাদের বোন। আমার সাথে আরো ১৩ জন মেয়ে আছে। তারা আমাদের পোষাকগুলো নিয়ে নিয়েছে। আমাদের কাপড় পড়তে দেয় না।
আমাদের মধ্যের একজন মেয়ে আত্মহত্যার প্রতিজ্ঞা করেছে। তাই আমি এই চিঠিটি লিখছি। সে নৃশংসভাবে ধর্ষিত হয়েছে।একজন সৈনিক তাকে ধর্ষনের পর তার বুক ও উরুতে আঘাত করেছে। সে অবিশ্বাস্য অত্যাচারের দ্বারা তাকে ভোগ করেছে। মেয়েটি তার মাথা জেলের দেয়ালের সাথে আঘাত করতে লাগলো, যতক্ষন না তার মৃত্যু হয়। মেয়েটি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না। যদিও ইসলামে আত্মহত্যা নিষিদ্ধ। কিন্তু আমি মেয়েটিকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আশা করছি, আল¬াহ তাকে ক্ষমা করবেন।কারণ আল¬াহ সবার প্রতি অসীম দয়ালু।

ভাই, আপনাদের আবারও বলছি, আল¬াহকে  ভয় করুন। আমাদের মেরে
ফেলুন। তাহলেই আমরা হয়তো শান্তি পাবো। সাহায্য করুন। সাহায্য করুন। সাহায্য করুন।”

পরে প্রায় একশত মুজাহিদীন কারাগারে মারাত্মক হামলা চালায়। প্রচন্ড গোলাবর্ষনের দ্বারা আমেরিকান সেন্যদের কম্পাউন্ডের ভেতরে অবরোধ করে রাখে। মুজাহিদীনরা ৮২ মিলিমিটার এবং ১২০ মিলিমিটার গোলাকার  কামান দ্বারা আমেরিকানদের আমেরিকানদের অনবরত গুলিবর্ষণ করতে থাকে। বাইরে বিশাল জনতার সমাবেশ হয়।

আতঙ্কের বিষয় ছিল যে, এই গোলাবর্ষণ হয়তো কয়েদীদের ক্ষতি করতে পারতো, কিন্তু তারা যোদ্ধাদের দ্বারা জেলখানার নকশা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জেনে নিয়েছিল।
বাগদাদের মাফকারাট আল-ইসলামের প্রতিনিধি রিপোর্ট করেছিল যে, ”মুজাহিদীনরা কয়েকদিনে ক্যাম্পের দেয়ালের অংশবিশেষ  ধ্বংস করতে কৃতকার্য হয়েছে।তারা বিস্ফোরনের মাধ্যমে ক্যাম্পের চারদিকে ঘেরা তেতর ও বাইরের বেড়ায় চার মিটার লম্বা একটি ছিদ্র করেছে।

ফাতেমা ও অন্য মেয়েদের ছিল অপ্রত্যাশিত আশা ও গভীর বিশ্বাস। চুড়ান্ত পর্যায়ে ফাতেমার চিঠির উত্তরে একজন লিখে পাঠালো ”দুঃখিত বোন, আমরা পুরুষ নই। শুধুমাত্র সত্যিকার পুরুষরাই তোমার আবেদনে সাহাষ্য করতে পারবে। আজকাল সত্যিকার পুরুষের বড়ই অভাব। বোন, আবারও দুঃখিত।”

মন্তব্য করা যায়, এখানে বর্তমান মুসলমানদের কাজ ও বিবেকের প্রতি অশ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ পেয়েছে। যার মূল কারণ, তাদেও বিবেক ও দায়ীত্বহীনতা। ইরাক যতদিন দখলে ছিল, ততদিন বেশীরভাগ এলাকাতেই এভাবে মেয়েরা ধর্ষিত হচ্ছিল। প্রায় এলাকাই মৃত শস্য ক্ষেত্রের ন্যায় পরিণত হয়েছে।

ফাতেমার চিঠির উত্তরের ব্যাপারে আমরা খুবই হতাশা ও অকৃতকার্ষতা অনুভব করছি।কারণ আমরা জানি, ইরাক ও আফগানিস্তানের কারাগারে অনেক অনেক ফাতেমা এবং বন্দিদশার বাইরেও আরো  অনেক বোনেরা প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হচ্ছে।এই আর্তনাদগুলো শোনার জন্য আমাদের কি করা উচিৎ? এবং কোথায় সেই মুসলমান পুরুষ যারা তাদের বোনদের আব্র“র জন্য লড়তে পারে।
আগে ইসলামের পূর্নাঙ্গ জীবনব্যবস্থায় মুসলমানদের জীবনযাত্রার মাঝেই আভিজাত্য ও সম্মান গ্রোথিত ছিল। উদহারণ স্বরুপ একজন মহিলা যখন কেনাকাটা করছিল, তার পোশাকের শেষ প্রান্ত একটি চেয়ারের সাথে বেঁধেছিল। যখন মহিলা উপরে উঠছিল, তার শরীরের কিছু গোপন অঙ্গদেখা গেল। সেই মহিলাটি স্বয়ং খলিফাকে ডাকার জন্য আর্তনাদ করে সাহাষ্য প্রার্থনা করলো, খলিফা এই চিঠিটি নগরীর প্রধানকে লিখলেন।

”রোমের কুকুর, আমি তোমার কাছে এমন আর্মি নিয়ে আসছি যার সম্মুখভাগ তোমার দুয়ারে এবং পশ্চাৎভাগ ঠিক এখানে।”

এই হলো সম্মান ও মহিমার বহিঃপ্রকাশ।যা ধর্ষনের চেয়ে অনেক কম অপরাধের জন্য ব্যক্ত প্রতিক্রিয়া।একশত যোদ্ধার বিপরীতে এমন একজন আর্মিই যথেষ্ট। এটা তখনকার কথা, যখন সত্যিকার মুসলমান পুরুষদের পাওয়া যেত।

আবু গারীব কারাগার থেকে মহিলা কয়েদি নূর, তার পক্ষ হতে বার্তা:
”আপনারা খাচ্ছেন, কি করে বোঝাব আমার ক্ষুধার কি যন্ত্রণা? আপনারা পান করছেন, কি করে অনুধাবন করাব আমি কতটা তৃষ্ণাত? আপনারা ঘুমাচ্ছেন, কি করে অনুভব করাব, নিদ্রাহীনতার কি ভোগান্তি? আপনাদের পরনে পোশাক,  আমি কি বোঝাতে পারবো, নগ্নতার কি লজ্জা! আমরা ধর্ষিত, লাঞ্চিত এবং আমাদের পোশাক ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। আমরা ক্ষুধার্ত, আমাদের পাকস্থলি খালি। কে আসবে আমাদের উদ্ধার করতে?”
 

Published in the daily Inqilab, Bangladesh
 in  2008,








5 comments:

  1. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  2. he allah ai sob nor posu theke amader meyeder rokha kor.

    ReplyDelete
  3. khob nisongsha,hay allah help us.

    ReplyDelete
  4. এরা কোনদিন মানুষ হতে পারে না ।
    এরা হচ্ছে জানোয়ার তার চাইতেও নিকৃষ্ট ।

    ReplyDelete
  5. My Prophet (sm) is innocent . He has no sin, not a single bindu. Oh Allah save me and hedayet all.

    ReplyDelete