It is now

Sunday, April 21, 2013

সন্তান প্রতিপালনে মায়ের ভূমিকা




By Khandaker Nazneen Sultana

"নবী  করীম (সাঃ) বলেছেন,  তোমাদের সন্তানদেরকে জ্ঞানদান করো, কেননা তারা তোমাদের পরবর্তী যুগের জন্য সৃষ্ট।" আর সর্বাগ্রে মা’ই পারে এ দায়িত্ব পালন করে সন্তানকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে। কারণ, মা’ই সন্তানের সবচেয়ে কাছের। সন্তানের সাথে মায়ের নাড়ীর সম্পর্ক। মায়ের কোলে বসে ও মায়ের সান্নিধ্যে অতি অল্প সময়ে সন্তান যা শিখতে পারে মায়ের সান্নিধ্যের বাইরে তা আয়ত্ত্ব করা সন্তানের জন্য দীর্ঘদিনেও অনেকক্ষেত্রে সম্ভব হয়ে ওঠে না।


সন্তান যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন থেকেই মায়ের চিন্তা-চেতনা, মন-মানসিকতা, কাজকর্ম ও আচার-আচরনের  ছাপ সন্তানের উপর ˉ’ায়ী প্রভাব ফেলতে থাকে এবং ক্রমেই তা পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। তাইতো আদর্শ মায়ের সন্তান হতে পারে সচ্চরিত্রবান, কর্মঠ, বিচক্ষণ, উন্নত মেধা ও মননসম্পন্ন।

মায়ের চরিত্রই সন্তানের চরিত্রে সবচেয়ে বেশী প্রতিফলিত হয়। আদর্শ ও
চরিত্রবান মায়ের সন্তানও আদর্শ ও চরিত্রবানই হয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যত জ্ঞানী-গুণী ও বিশেষ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তির এই পৃথিবীতে আগমন ঘটেছে তাদের সকলের মা’ই আদর্শ মা ছিলেন।যেমন-হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর মা খাদিজা (রাঃ), বায়েজিদ বুস্তামের মা, হযরত ঈসা (আঃ)-এর মা মারিয়াম (রাঃ)।

সন্তানদের কিভাবে মহান ব্যক্তিত্বশীল ও অনুকরনীয় আদর্শরুপে গড়ে তোলা যায়, সে ব্যাপারে আল কোরআনের সূরা লোকমানে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-
*শৈশব থেকেই সন্তানদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে শিক্ষা দান করতে হবে।
*শিরক ও বিদ’আতের ধারণা দিতে হবে।
*বিনয়ী, ভদ্র ও নম্র হতে শেখাতে হবে।
*ভালো কাজের আদেশ ও মন্দকাজে বাধাদানে অনুপ্রাণিত করতে হবে।
*ধৈর্য ও সহনশীলতার শিক্ষাদান প্রয়োজন।
*বোঝাতে হবে পরনিন্দা, মিথ্যা ও অহংকার মারাত্মক অপরাধ।
*নিয়মিত নামাজ পড়া, দান-খয়রাত করা, শালীনতা বজায় রেখে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা অবশ্যই পালনীয়।
সন্তানদের এসব জানানো, বোঝানো ও পালন করানো আবশ্যক। সন্তানদের এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণে মা’ই পারে মুখ্য ও অগ্রনী ভূমিকা রাখতে।
একটি মুরগী যেমন তার পাখা দিয়ে বাচ্চাদেরকে শত্র“র আক্রমণ হতে রক্ষা করতে পারে, তেমনিভাবে একজন মা’ও স্নেহ-মায়া-মমতা ও শাসনের ছায়ায় রেখে সন্তানদের সমস্ত কুপ্রভাবও খারাপ কাজ থেকে আগলে রাখতে পারে।প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি শিশুই যদি আদর্শরুপে বেড়ে উঠতে পারে, তবে খুব সহজেই তেরী হয়ে যাবে আদর্শ ও চরিত্রবান সমাজ, দেশ ও বিশ্ব।
নেপোলিয়ন তাইতো বলেছেন- "আমায় একটি আদর্শ মা দাও, আমি তোমায় একটি আদশ জাতি দেবো।"

মা’ই ঘরের আকর্ষণ, মা’ই ঘরের মূল্যবান সম্পদ। যে গৃহে মা নেই সে গৃহের কোন আকর্ষণও নেই।

এ বিশ্ব ভূমন্ডলে মানুষের সর্বাধিক কাছের মানুষই তার মা। মা’ই সন্তানের জন্য সবচেয়ে বেশী কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেন। আর তাইতো 'মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত।' মায়ের এই মূল্যবান মর্যাদার কারণ মা দশ মাস দশ দিন অনেক কষ্ট ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন।তারপর অবর্ণনীয় প্রসব বেদনা, সন্তানকে দুই বছর পর্যন্ত দুধ খাওয়ানো, এসব মায়েরই দায়িত্ব।

সংসার সাজাতে ও সন্তান প্রতিপালনে মায়ের গুরুত্ব ও ভূমিকা
অপরিসীম।তাই আসুন- আমি, আপনি এবং আমরা সকলেই অনুকরনীয় আদর্শ মা হয়ে গড়ে উঠি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সকল ভাল কাজ করার তৈফিক দান করুন।আমিন।

প্রকাশ: দৈনিক ইনকিলাব (ইসলামী জীবন), ৯ আগস্ট ২০০৯।

No comments:

Post a Comment