It is now

Tuesday, March 5, 2013

২. এইডস প্রতিরোধে ইসলামের ভূমিকা


২. এইডস প্রতিরোধে ইসলামের ভূমিকা
বর্তমান বিশ্বের অন্যতম নিরাময়হীন রোগ হচ্ছে এইডস । এটি এইচ,আই,ভি  নামক ভাইরাস বাহিত একটি প্রাণঘাতী রোগ। এই ভাইরাস মানব দেহে প্রবেশ করলে ঐ ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধকারী কোষসমূহকে ধীরে ধীরে ধংস করে ফেলে এবং নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। ভাইরাসটি মানব দেহে ঢোকার পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ক্ষেত্র বিশেষে ৮, ১০ কিংবা ২০ বছরও সময় লেগে যেতে পারে। মানব সভ্যতার জন্য এইডস মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

১৯৮১ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলস শহরে ৫ জন সমকামীর মাঝে সর্বপ্রথম এই রোগটি ধরা পরে। আর বাংলাদেশে প্রথম এইডস সনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। (সূত্রঃ সিডিসি ১৯৮১)
২০০৮ সালের জুলাই মাসের  টঘঅওউঝ এর রিপোর্ট অনুযায়ী পৃথিবীতে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৩ মিলিয়ন। এদের মাঝে মহিলা ১৫ মিলিয়ন এবং শিশু প্রায় ২ মিলিয়ন। ২০০৭ সালে বিশ্বে নতুনভাবে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২.৭ মিলিয়ন। এবং মৃতের সংখ্যা প্রায় ২ মিলিয়ন। ১৯৮১ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রাথিবীতে এইডস রোগে মৃতের সংখ্যা প্রায় ২৫ মিলিয়ন।
২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার আর ভারতে প্রায় ২.৪৫ মিলিয়ন। সাব-সাহারান আফ্রিকায় এইডস রোগীর সংখ্যা প্রায় ২২ মিলিয়ন। মধ্য-পূর্ব ও উত্তর আফ্রিকায় প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার জন। অর্থাৎ বিশ্বের ৬৬% এইডস আক্রান্ত রোগীই আফ্রিকায়। বিশ্বে তুলনামূলকভাবে মুসলিম দেশগুলোতে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আনেক কম। (সূত্রঃ টঘঅওউঝ ২০০৮  ৎবঢ়ড়ৎঃ ড়হ ঃযব মষড়নধষ অওউঝ বঢ়রফবসরপ)

এইডস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত মানুষের আয়ত্তে আসেনি। তাই
এইচ,আই,ভি প্রতিরোধই এইডস থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। কথায় বলে- 'চৎবাবহঃরড়হ রং নবঃঃবৎ ঃযধহ পঁৎব.' অর্থাৎ প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।

এইচ,আই,ভি/ এইডস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে নৈতিক তথা ধর্মীয় অনুশাসনাদিই সর্বাপেক্ষা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বিদায় হজ্বের ভাষণে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছিলেন যে, আমি তোমাদের জন্য দুটো জিনিষ রেখে যাচ্ছি।
(১)    আল-কোরআন ও (২) রাসুলুল্লাহর সুন্নাহ অর্থাৎ আল-হাদীস।
পৃথিবীর যাবতীয় সকল সমস্যার সমাধান একমাত্র কোরআন এবং হাদীস থেকেই নেয়া সম্ভব। কোরআন এবং হাদীস অনুযায়ী চললে কোন সমস্যাই আর সমস্যা থাকে না।

গধহ রং ধ ৎধঃরড়হধষ ধহরসধষ অর্থাৎ মানুষ বিবেকবান প্রানী। কথায় নয় কাজেও মানুষকে এই সত্যটিই প্রমান করতে হবে।


কিভাবে একজন এইচ,আই,ভি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে? এ প্রশ্নের জবাবে সংক্ষেপে বলা যায়,
(১) এইচ,আই,ভি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলনের মাধ্যমে।
(২) এইচ,আই,ভি আছে এমন কারো রক্ত গ্রহনের মাধ্যমে।
(৩) ইনজেকশনের সুঁই/ সিরিজ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে।
(৪) এইচ,আই,ভি আক্রান্ত মা থেকে শিশুতে- গর্ভাবস্থায়, প্রসবকালে বা বুকের দুধ পানের মাধ্যমে।

অর্থাৎ এইচ,আই,ভি ভাইরাস শুধুমাত্র আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের ৪টি তরল পদার্থ যেমনঃ রক্ত, বীর্ষ, যৌনরস ও বুকের দুধ এর মধ্যে থাকে। আবার মানুষের শরীরের বাইরে অন্য কোন প্রানীর শরীরে এইচ,আই,ভি বাস করতে পারে না।

এইচ,আই,ভি ছড়ানোর শর্ত হচ্ছে, আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, বীর্য, যৌনরস বা বুকের দুধ অন্যের শরীরে যেতে হবে। দৈনন্দিন কাজ বা সামাজিক মেলামেশায় এইচ,আই,ভি ছড়াতে পারে না। এমনকি কোন কীট পতঙ্গের মাধ্যমেও এইচ,আই,ভি ছড়ায় না।

একটু সতর্কভাবে ইসলামী বিধিবিধান মেনে চললেই এইচ,আই,ভি প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেমন ঃ
(১) বিবাহ বহির্ভূত যৌনকাজ থেকে বিরত থাকা।
(২) স্বামী ও স্ত্রী পরস্পর বিশ্বস্ত থাকা।
(৩) ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা পরিত্যাগ বা সুঁই/ সিরিঞ্জ ভাগাভাগি বন্ধ করা।
(৪) অপরীক্ষিত রক্ত গ্রহণ না করা।
(৫) খাদ্য গ্রহণে ও কাজকর্মে হালাল-হারাম বেছে চলা।
(৬) ব্যভিচার হতে দূরে থাকা। অবৈধ প্রেম ও অপ্রাকৃতিক আচরণ ও সমকামিতা সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা।
(৭) কেয়ামত ও শেষ বিচারে বিশ্বাস রাখা।
(৮) বেহেস্তের অফুরন্ত সুখের আশায় এ জীবনে সংযমী হওয়া।
(৯) দোযকের অপরিমেয় দুঃখ হতে পরিত্রাণ পেতে সকল মন্দ ও খারাপ কাজ হতে দূরে থাকা।
(১০) অপরাধকারী তওবা করে ভবিষ্যতে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সুধরে নেয়া।

ইসলাম মানবতার ধর্ম। ইসলাম বৈরাগ্য জীবন স্বীকার করে না। ইসলামের বিধান অনুযায়ী বিবাহের মাধ্যমেই মানব-চরিত্রের কু-প্রবৃত্তি সংশোধন সম্ভব। বিয়ের গুরুত্ব ও পাত্র-পাত্রী সম্পর্কে আল কোরআনের সূরা রুমÑএর ২১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেÑ“আর তাঁর নিদের্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও। এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও মমতা সৃষ্টি করেছেন।”

নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, "নারী পুরুষের বিবাহ আমার সুন্নত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নত হতে বিমুখ হবে, সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।" (সহীহ বুখারী, কিতাবুন নিকাহ, হাদীস নং-২৪৮৭)

অভিভাবকদের উচিৎ সঠিক বয়সে পুত্র-কন্যাদের বিয়ে দেয়া। সঠিক বয়সে বিয়ে হলে বিবাহ বহির্ভূত যৌনাচারে জড়ানোর সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায়। বিবাহ বহির্ভূত যৌনাচার ইসলামে যেমন নিষিদ্ধ তদ্রুপ তা অমান্যকারীর জন্যও রয়েছে পরকালে কঠিন শাস্তি।

সূরা আল আরাফÑএর ৩৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “আল্লাহ হারাম করেছেন সকল প্রকার প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য নিলজ্জ ও পাপ কাজ-কর্ম সমূহ।”

সূরা আল আনআম-এর ১২০নং আয়াতে বলা হয়েছে, “আর তোমরা বর্জন কর প্রকাশ্য পাপ এবং অপ্রকাশ্য পাপও।”
সূরা আন নিসার ৩০নং আয়াতে বলা হয়েছে, “আর যে ব্যক্তি এরূপ কাজ করে, সীমা লঙ্ঘন করে, এবং জুলুম করে তাহলে আমি সত্ত্বরই তাকে দোযখের আগুনে দাখিল করবো। এবং ইহা আল্লাহর পক্ষে সহজ।”

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে খুব সহজেই এইচ,আই,ভি প্রতিরোধ করা যায় । যাদের বিবাহ করার সামর্থ্য বা বয়স হয়নি তাদের উচিৎ যৌনকাজ হতে বিরত থাকা।

এ সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) বলেছেনÑ“যারা বিবাহ করার সমর্থ রাখে না, তাদের কর্তব্য হলো রোজা রাখা।”(বোখারী শরীফ, কিতাবুন নিকাহ, হাদীস নং-৪৬৭৭)

দেহ ও মনে নারী-পুরুষ সকলেরই পর্দা রক্ষা করা উচিৎ। সূরা আন নূর-এর এর ৩০নং আয়াতে বলা হয়েছেÑ“মুমিনদের বলো তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটিই তাদের জন্য পবিত্রতর ব্যবস্থা।”

যে সব পরিবেশে গেলে কেউ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, সে সব স্পর্শকাতর জায়গা পরিহার করে চলা উচিত। স্ত্রীর সাথে সুসম্পর্ক রাখাকে ইসলাম উৎসাহিত করেছে। স্ত্রীর মর্যাদা প্রসঙ্গে নবী-করীম (সাঃ) বলেছেনÑ“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীর নিকট সবচাইতে উত্তম।”(তিরমিযী শরীফ, কিতাবুল মানাক্বিব, হাদীস নং- ৩৮৩০)

তাই স্বামীদের উচিত সর্বাগ্রে স্ত্রীর হক আদায় করা। নিজ পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে ভাবলে কেউ অন্যদিকে মনোযোগ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। কেয়ামত ও শেষ বিচারকে বিশ্বাসের মাঝে রেখে কোরআন ও হাদীসে উল্লেখিত দোযখের ভয়াবহতা স্বরণ করলে আর কোন সুস্থ মানুষের পক্ষেই অবৈধ কার্য ও পাপ কর্মে সম্পৃক্ত হওয়া সম্ভব নয়।

হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুষ, দম ফুরালেই ঠুস,

তবুতো ভাই কারোরি নাই, একটু খানি হুস।

আমাদের হুস করে চলতে হবে, বলতে হবে। প্রতিটি কাজই করতে হবে হুস করে। তবেই এইডস জাতীয় মারাত্মক সমস্যার সমাধান সম্ভব।

সূরা আল ইমরান-এর ১০৪নং আয়াতে বলা হয়েছেÑ“তোমাদের মধ্যে এমন একদল থাকা আবশ্যক, যারা কল্যানের আহ্বান জানাবে। ভালো কাজে আদেশ করবে, মন্দ কাজে নিষেধ করবে। তারাই হচ্ছে সফলকাম”।

অর্থাৎ সকলের মধ্য হতে কোরআন ও হাদীসের আলোকে সকল সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই সকলে এ দায়ীত্ব থেকে অব্যাহতি পাবে।

সূরা বনীইসরাঈল-এর ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছেÑ"তোমরা যেনার ধারে কাছেও যেওনা। এটা অত্যন্ত অশ্লীল ও মন্দপথ।"

এইচ,আই,ভি ছড়ানোর আর একটি আশংকা ও উদ্ধেগের বিষয় মাদকাসক্তি। অনেক তরুণ বিভ্রান্ত হয়ে মাদকের ছোবলে দংশিত হচ্ছে। এসব তরুণরা এইচ,আই,ভি বিস্তারে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে। বিশেষ করে যারা শিরায় ইনজেকশানের মাধ্যমে নেশা করে। এই ব্যপারটি তাদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এরা এক সিরিঞ্জ একাধিকবার একাধিকজন ব্যবহার করে। এতে এইচ,আই,ভি আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত থেকে খুব সহজেই আর একজনের রক্তে এইচ,আই,ভি ভাইরাস আক্রমন করে।

মাদক বা নেশা গ্রহণ ইসলামে নিষিদ্ধ। মাদক মানুষকে ধ্বংস করে। তাই তরুণদের গভীর মমত্ব ও দরদ দিয়ে আমাদের বোঝাতে হবে। তাদেরকে ইসলামের ছায়াতলে আসার জন্য আহ্বান জানাতে হবে।

মাদক সম্পর্কে সূরা আল বাক্বারাহ-এর ২১৯ নং আয়াতে বলা হয়েছেÑ“তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলে দাও-এই দ’ুয়ের মাঝে রয়েছে মহাপাপ আর মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে। তবে এর অপকার উপকারিতা থেকে অনেক বেশী ও বিপদজ্জনক।”

মাদক গ্রহনের ক্ষেত্রে এইচ,আই,ভি প্রতিরোধের উপায় হচ্ছে মাদক গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। প্রয়োজনে চিকিৎসা নেয়া এবং সুই বা সিরিঞ্জ ভাগাভাগি সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা। রসুল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।”  (বুখারী-কিতাবুন নিকাহ, হাদীস নং- ৪৭৮৯)

সুতরাং আসুন আমরা যৌনক্ষেত্রে সংযমী হই এবং মাদক থেকে সম্পূর্ণ বিরত থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করি এবং এইচ,আই,ভি প্রতিরোধ করি।

আল্লাহ পাক মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। অন্য যে কোন প্রানীর তুলনায় মানুষের বিবেক, বুদ্ধি, জ্ঞান অনেক বেশী। অথচ যখনই আমরা এইচ,আই,ভি পরিস্থিতির কথা শুনি, তখনই মানুষের অজ্ঞানতার কথা মনে পড়ে যায়। ভাবি-
এত অবুজ শিশু পৃথিবী ভরে,
সকলরে মোরা বোঝাই কেমন করে!

বাংলাদেশে যেমন বিভিন্ন শ্রেণীর পতিতা রয়েছে, তেমনি তাদের হরেক রকম খদ্দেরও রয়েছে।এইচ,আই,ভি ভাইরাসের জন্য উভয়েই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এইচ,আই,ভি প্রতিরোধ করতে হলে সমাজ থেকে পতিতাবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে।

সূরা আন নূর-এর ২নং আয়াতে বলা হয়েছে, “ব্যভিচারিনী নারী এবং ব্যভিচারী পুরুষকে ১০০ দোররা লাগাও এবং আল্লাহর বিধান পালনে তাদের উভয়ের প্রতি তোমাদের মনে কণামাত্র দয়া আসা উচিৎ নয়। যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি এবং কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখ, মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।”

এভাবে ব্যভিচারী নারী-পুরুষকে প্রত্যেক্ষভাবে জন সম্মুখে শাস্তি দিলে ভবিষ্যতে অন্য কেউ ব্যভিচার করার সাহস পাবে না। লজ্জিত হবে। আর ব্যভিচার যত কমবে, এইডস ও তত কমবে।
অনেক সময় গরীব মেয়েদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ যৌন কাজে প্রলুব্ধ করা হয়। এই সম্পর্কে আমাদের সন্তানদের সচেতন করা উচিৎ। প্রেম হবে পবিত্র। প্রেমের ক্ষেত্রে-
ওভ ুড়ঁ ঃড়ঁপয, ুড়ঁ ংঁভভবৎ সঁপয.

সূরা মায়েদাহ-এর ৫নং আয়াতে বলা হয়েছে, “তোমরা তাদেরকে পতœী করে নাও, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয় করো না। যে ব্যক্তি ঈমানের বিষয়ের সাথে কুফর করবে, তার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে। এবং সে ব্যক্তি পরকালে সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।”

যদি কারো পক্ষে শারীরিক মিলন ছাড়া থাকা সম্ভব না হয়, তবে তার উচিৎ বিবাহ করা। আমাদের সমাজে বিয়েকে সহজ করা উচিত। অনর্থক যৌতুকের কারণে বিয়ে যেন কঠিন না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত।

সূরা আন নূর-এর ৩৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেÑ“আর যারা বিবাহ করিতে অসমর্থ তাদের উচিৎ যেন তারা সংযমী হয়ে থাকে।”

এইডস এর আর একটি প্রধান কারণ সমকামীতা। পশ্চীমা দেশগুলো লাইসেন্স দিয়ে সমকামীতাকে সাপোর্ট করছে। নারী-নারী কিংবা পুরুষ-পুরুষ বিবাহ সেখানে বৈধ । তারা পতিতাবৃত্তিকেও বৈধ করেছে। এটা কোন সমস্যার সমাধান নয়। এসব ভুল পদক্ষেপে সমস্যা আরো জটিল থেকে জটিলতর আকার ধারন করেছে।

লূত (আঃ)-এর সময় এ ধরনের অপ্রাকৃতিক আচার-আচারণ, সীমা লঙ্ঘন ও সমকামীতার জন্য সমগ্র জাতি আল্লাহর ঘোর আযাবে পতিত হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে সূরা আশ-শোআরার ১৬৫ থেকে ১৭৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

“তোমরা কি সমস্ত বিশ্ববাসীর মধ্য হতে পুরুষদের সাথে অপকর্ম করিতেছ ?
 তোমাদের রব তোমাদের জন্য যেই স্ত্রী সকল পয়দা করেছেন, তাদেরকে বর্জন করিতেছ? তোমরা সীমা লংঘনকারী লোক।
তাহারা বলিল হে লূত! তুমি যদি বিরত না থাক, তবে অবশ্যই বহিস্কার করা হবে।
লুত বলিলেন, আমি তোমাদের এই কার্যের প্রতি অত্যন্ত ঘৃণা পোষন করি।
 (তারা মানলো না। আযাবের লক্ষণ পেয়ে লুত (আঃ) দোয়া করলেন।) হে আমার রব! আমাকে এবং আমার সংশ্লিষ্টদেরকে ইহা হতে রক্ষা কর !
সুতরাং আমি তাহাকে ও তাহার সংশ্লিষ্টদের সকলকে রক্ষা করিলাম।
অনন্তর আমি অন্যান্য সকলকেই ধ্বংস করে দিলাম।
আর আমি তাদের উপর এক বিশেষ প্রকারের (প্রস্তর) বৃষ্টি বর্ষন করিলাম; অতএব কি নিকৃষ্ট বৃষ্টি ছিল, যাহা সেই পাপীদের উপর বর্ষিত হইয়াছিল।”

সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস
অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।
জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসৎ সঙ্গ ও সকল কুপ্রবৃত্তি ত্যাগ করতে হবে। এই পৃথিবীতে যে যার সঙ্গী হবে, কেয়ামতের দিনেও তাকে সেই দলভুক্ত করা হবে। তাই আসুন,
বুদ্ধিমান হই, ঠিক কাজটি করি।
অসৎ সঙ্গ ও খারাপ কাজ ত্যাগ করে এইডস থেকে দ্রুত পরিত্রান পাই।

কেউ কেউ এইচ,আই,ভি সম্পর্কে বিস্তারিত না জানার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সমাজচ্যুত করা এবং মৃত্যুর পর দাফন-কাফন ও জানাযা করা যাবে না। এমন মত প্রকাশ করতে পারে। আমাদেরকে এসব বিষয়ে খুব সাবধানী হতে হবে। কারণ আমরা জানি না তিনি কিভাবে এ রোগে আক্রান্ত হলেন।

সূরা আল হুজরাতÑএর ১১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “হে মুমিনগন! পুরুষরা যেন অপর পুরুষকে উপহাস না করে, হতে পারে উপহাসকৃতরা উপহাসকারীর চাইতে উত্তম। তাছাড়া নারীরা যেন অপর নারীদেরকে উপহাস না করে। হতে পারে উপহাসকৃতরা উপহাসকারীর চাইতে উত্তম। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না। তোমরা এক অপরকে মন্দ নামে ডেকোনা।”

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন:
“মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে না তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে, না তাকে মিথ্যা বলতে পারে। না তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে। বস্তুত: প্রত্যেক  মুসলমানের মান-ইজ্জত, ধন-সম্পদ, ও রক্ত অন্য সব মুসলমানের উপর হারাম। (তিনি বক্ষস্থলের দিকে ইশারা করে বললেন) তাকওয়া এখানে আছে।”

কোন ব্যক্তির খারাপ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, তার মুসলমান ভাই তাকে ঘৃণা করে। হেয় প্রতিপন্ন করে। (সহীহ তিরমিযি, কিতাবুল বিরবি, ওয়াসসিলাহী, হাদীস নং -১৮৫০)

উপরের আয়াত ও হাদীস হতে এটা স্পষ্ট যে, কোন মুসলমানের সম্মান রক্ষা করা অপর মুসলমানের কর্তব্য ও দায়িত্ব। কাউকে উপহাস করা, কারো সম্পর্কে সন্দেহ করা নিন্দা করা ইত্যাদি ইসলামে নিষিদ্ধ।

আমাদের উচিৎ এইচ,আই,ভি বা এইডস আক্রান্ত ভাইবোনদের খোঁজ-খবর নেয়া। বিশেষ করে যখন তারা অসুস্থ হয়ে যায়। অসুস্থ লোকের খোঁজ নেয়া ইসলামের বড় সওয়াবের কাজ। হাদীসে কুদসীতে বর্নিত আছে- আল্লাহ কিয়ামতের দিন বলবেন, "হে আমার বান্দা, আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমার খোঁজ নাওনি। তখন বান্দা বলবে, হে আল্লাহ তুমি কিভাবে অসুস্থ হতে পারো, তখন আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিলো, তার খোঁজ নিলেই আমার খোঁজ নেয়া হতো।” (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৪৬৬১)

রসূল (সাঃ) বলেছেন, “পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া করো, তাহলে আকাশবাসীরা তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।” (তিরমিযি শরীফ)

নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না।” (সহীহ বুখারী, কিতাবুল আদাব, হাদীস নং-৫৫৩৮)

অতএব রোগাক্রান্ত সকল ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও মমত্ববোধকে প্রসারিত করতে হবে।রোগীকে দেখতে যাওয়ার প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “কোন মুসলিম যতক্ষন কোন মুসলিম ভাইয়ের সেবা শুশ্র“ষায় রত থাকে এবং যতক্ষন পর্যন্ত সে ফিরে না আসে, ততক্ষন সে জান্নাতের নেয়ামতরাজিতে অবস্থান করতে থাকে। প্রশ্ন করা হলো, জান্নাতের নিয়ামতরাজি কি? তিনি বললেন, এটি হলো জান্নাতের ফলসমূহ।” (মুসলিম, হাদীস নং- ৪৬৬০)

আমরা সকলে নিশ্চয়ই একমত হবো যে, পৃথিবী ব্যাপী এ মানবিক বিপর্যয়ে আমরা বসে থাকতে পারি না। আমাদের এ বিপর্যয়ে যেমন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। তেমনি আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহযোগীতায় এগিয়ে আসতে হবে। আমরা যদি উদার মনে এগিয়ে আসি, তাহলে একটি ইতিবাচক পরিবেশ ও সুখী সমাজ তৈরী হবে। এইচ,আই,ভি ও এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিরা মানসিক শক্তি পাবে।
সূরা আল হাশরের ১০ নম্বর আয়াতের ন্যায় আমরা আল কোরআনের ভাষায় প্রার্থনা করি, “হে আমাদের রব! আমাদের অন্তরে মুমিনদের প্রতি ঘৃণা ও আক্রোশ সৃষ্টি করো না।”

আমরা যদি ইসলামের মহানুভবতার মহান আদর্শ সমাজে তুলে ধরতে পারি, নিজেরা যথাযথভাবে তার চর্চা করি, তাহলে এইডসসহ যে কোন সমস্যাকে ইনশাআল্লাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো।
ইসলাম শুধু ধর্মাচার নয়, বরং এটি মানুষের পার্থিব কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে একটি পূনাঙ্গ ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবন বিধান। মানব জীবনের যাবতীয় সমস্যাবলীর সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাধান ইসলামী জীবনদর্শনে রয়েছে বলেই ইসলামকে বলা হয়, ‘অ পড়সঢ়ষবঃব পড়ফব ড়ভ ষরভব. দ

বিপথগামী মানুষকে সঠিক পথের দিশা দিতে যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল এই পৃথিবীতে এসেছেন। জাহান্নামগামী মানুষদের জান্নাতের দিকে ডেকেছেন। অবিশ্বাসী ও অপরাধীদেরকে বিশ্বাসী এবং পবিত্র জীবন-যাপনে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাতœক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষদেরকে আলোর পথে ডেকেছেন।

এ প্রসঙ্গে সূরা আল ইমরানের ১০৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “তোমরা একটি অগ্নিকুন্ডের পাশে দাঁড়িয়েছিলে, আল্লাহ তোমাদেরকে সেই অনিবার্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করলেন।”
ইসলাম মানুষকে সুন্দর আচরণে ভূষিত হওয়ার আহবান জানায়। তাই ব্যক্তি ও সমাজে যা কিছুই স্বাস্থের জন্য হুমকি ও ক্ষতিস্বরূপ, সবই ইসলাম নিষিদ্ধ বিবেচনা করে।

এ প্রসঙ্গে সূরা আল্ বাক্কারাহ্ এর ১৯৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “তোমরা তোমাদের হাতগুলো ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।”

আমাদের সবার উচিৎ ইসলামের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে পথ চলা। জীবনের যা কিছু মন্দ, যা কিছু খারাপ করেছি বিবেকের গোচরে বা অগোচরে সবকিছুর জন্য খাস দিলে তওবা করে নিজেকে আবারো শুধরে নেয়া আমাদের কর্তব্য।

সূরা মারইয়াম এর ৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "যারা তওবা করেছে এবং ঈমান আনয়ন করেছে ও নেক কাজ করেছে, বস্তুত: তারা বেহেস্তে যাবে। এবং তাদের বিন্দুমাত্রও ক্ষতি করা হবে না।

এইডস এ আক্রান্ত ভাই-বোনদের উচিৎ খুব দ্রুত আল্লাহর দরবারে তওবা করে নেয়া। যে মৃত্যু পথযাত্রী, তওবাতে তার মৃত্যু যন্ত্রণা কমে যাবে ইনশাল্লাহ। যে গুরুতর অসুস্থ তার অসুস্থতা কমবে।আল্লাহর রহমতে পুরোপুরি সেরেও যেতে পারে। আর পরকালের মুক্তিতো আছেই।

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, মানুষের গুনাহ পাহাড় সমান হলে আল্লাহর ক্ষমা তার চেয়েও বেশী। অতএব কেউ যদি ব্যক্তিগত দোষের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তাকে আল্লাহর কাছে খাস দিলে শুদ্ধ নিয়তে ক্ষমা চাইতে হবে। তওবা যথাযথ হলে আল্লাহ সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন ইনশাল্লাহ।
ভুল মানবীয়, ক্ষমা স্বর্গীয়।

মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়। তবে এই ভুলকে সংশোধন করে আমাদেরকে সঠিক পথে চলতে হবে।
সূরা আল-আনআম এর আয়াত নং-৫৪ তে বলা হয়েছেÑ“যারা আমার আয়াত সমূহের উপর ঈমান এনেছে তারা যখন তোমার কাছে আসবে, তখন তুমি তাদের বলো, আল্লাহতা’য়ালার পক্ষ থেকে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের উপর অনুগ্রহ করাটাকে আল্লাহতা’য়ালা নিজের উপর কর্তব্য বলে স্থির করে নিয়েছেন। তবে তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কখনো অজ্ঞানতাবশত কোন অন্যায় কাজ করে বসে এবং পরক্ষণেই তওবা করে ও নিজের জীবনকে শুধরে নেয়, তাহলে আল্লাহতা’য়ালা একান্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।”

সূরা নিসার আয়াত নং ১৬ তে বলা হয়েছে, “আর যে কোন দুই ব্যক্তিই তোমাদের মধ্য হতে এই নির্লজ্জতার কাজ করবে, তবে তাহাদিগকে কষ্ট প্রদান কর, অনন্তর যদি তাহারা তওবা করে এবং সংশোধন করে নেয়, তাহলে তাদের পিছনে লেগে থেকো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তওবা কবুলকারী করুনাময়।”

অতএব আমরা যদি বুঝতে পারি যে, কেউ ভুলের মাঝে পতিত হয়েছে, আমাদের কর্তব্য হলো তাকে সাহায্য করা, ঘৃনা করা নয়। যাতে সে ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, সে ব্যাপারে উদ্দ্যোগী হওয়া। আমরা তাকে আল্লাহর পথে চলতে সাহায্য করতে পারি। আমাদের নিরাশ হবার কিছুই নেই। খাস দিলে তওবা করলে মহান করুনাময় আল্লাহতা’য়ালা আমাদের ক্ষমা করবেন ইনশাল্লাহ।

'দশে মিলে করি কাজ,
হারি জিতি নাহি লাজ।' 
আসুন আমরা সবাই ইসলামের ছায়াতলে এসে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এইচ,আই,ভি ও এইডস সহ যাবতীয় সমস্যার সমাধানকল্পে কাজ করে যাই।
আল্লাহ আমাদের সবচাইতে সঠিক ও সরল পথে পথ চলার তৈফিক দান করুন। আমীন।

প্রকাশ ঃ দৈনিক ইনকিলাব, (ইসলামী জীবন), ৫, ১০ আগষ্ট, ২০০৮ইং।  
    ৬, ৮, ১০,১৩ ডিসেম্বর, ২০০৯ইং।

No comments:

Post a Comment